ডেক্স রিপোর্ট : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসকদের এক মাসে খাবারের বিল ২০ কোটি টাকাকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন। বলেন, ওই বিলে শুধু চিকিৎসকদের খাবার খরচ নয়, হাসপাতালের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর থাকা-খাওয়া, যাতায়াতসহ সব ধরনের খরচ দেখানো হয়েছে।
গতকাল দুপুরে ঢামেকের প্রশাসনিক ব্লকের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, ঢামেকের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমান, অধ্যাপক ডা. বিল্লাল আলম, অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদ, সহকারী পরিচালক ডা. আশরাফুন নাহার।
পরিচালক বলেন, ঢামেকে করোনা চিকিৎসার জন্য ২ হাজার ২৭৬ জন স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য এক মাসে হোটেলে থাকা-খাওয়া বাবদ খরচ হয়েছে ভ্যাট ছাড়া ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা। আর ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ খরচ পড়েছিল ১৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৭ টাকা। এর বাইরে ২ হাজার ২৭৬ জন জনের যাতায়াতে এক মাসে খরচ হয় ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭০ টাকা। যাতায়াতের জন্য ১০টি ১২ সিটের এসি মাইক্রোবাস, ১টি সিটের এসি মাইক্রোবাস, ১টি ২৬ সিটের এসি ট্যুরিস্ট কোচ ও ২টি ৪৫ সিটের নন এসি বড় বাস ভাড়া করা হয়েছে।
যাতায়াত বাবদ ব্যয় এক মাসে ৪৬ লাখ ৯৮ লাখ ৮৭০ টাকা হলে ২ মাসে ব্যয় হয় ১ কোটি টাকা। একইভাবে দুই মাস হোটেলের ভাড়া, খাওয়া ও পরিবহন বাবদ প্রায় ২৬ কোটি টাকা খরচ হবে। এ হিসাবে দুই মাসের খরচ ২০ কোটি টাকা ধরে বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ২৩শে জুন হাসপাতালের ব্যয় নির্বাহের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। যাতে হোটেল ভাড়া ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, খাওয়া বাবদ ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও পরিবহন বাবদ ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, গত ২রা মে থেকে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে করোনা রোগী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মচারীদের ডিউটি শেষে কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য কিছু আবাসিক হোটেল ভাড়া নেয়া হয়। জুনের প্রথমদিকে হোটেল বাজেট দিয়েছিলাম ২০ কোটি টাকা। প্রথমে প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালকে ১ কোটি করে টাকা দেয়া হয়েছিল। আমরাও পেয়েছিলাম। সেই টাকা দিয়ে পরিবহন ও হোটেলের কিছু বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত থাকা- খাওয়ার জন্য ৩০টি হোটেল ভাড়া নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে সভাপতি হিসেবে আছেন- অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. মোজাফ্ফর হোসেন, সদস্য সচিব উপ-পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদ ও সদস্য ডা. আশরাফুন নাহার। ওনারা হোটেলে যাতায়াতসহ খাওয়ার ব্যাপারটি তদারকি করেন। প্রত্যেক হোটেলের সঙ্গে আমাদের চুক্তিপত্র আছে।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক বিল্লাল আলম বলেন, শুধু চিকিৎসকদের খাওয়া খরচ ২০ কোটি টাকা, আমরা কী এমন ডাক্তার, যে একটি কলা ১ হাজার টাকা দিয়ে কিনে খাবো? এসব কথা যেখানে বলা হয়েছে, আমার মনে হয় এর কোনো ভিত্তি নাই। এতে চিকিৎসক সমাজকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। অবশ্যই এর তদন্ত হওয়ার দরকার ছিল।
তিনি বলেন, যদি স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি হয়ে থাকে অবশ্যই তদন্ত করা উচিত। আমরাতো ইচ্ছা করে হোটেলে থাকতে চাই না। যদি সুযোগ থাকতো হোম আইসোলেশনে থাকার বা হাসপাতালে থাকার, তাহলে সেটাই করতাম। কাল্পনিকভাবে ফেসবুক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের ভিত্তিহীন কথা ছড়ানো হয়েছে।