স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

কর্মস্থলে ফিরতে না পেরে উৎকণ্ঠায় ছুটিতে আসা হাজারো প্রবাসী!

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে অসংখ্য প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছিলেন। সবচেয়ে বেশি এসেছেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কর্মস্থলে ফিরবেন এমন প্রত্যাশা নিয়ে ফেরার পর এখন উভয় সংকটে পড়েছেন তারা, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফেরা প্রবাসীরা। একদিকে অনুমতি না মেলায় দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না, অন্যদিকে দেশেও কোনো আয়-রোজগার নেই। খবর বণিক বার্তা

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে ফেরা একাধিক প্রবাসী বাংলাদেশীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল বন্ধ থাকায় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে দেশে এসেছিলেন তারা। কিন্তু দেশে ফেরার পর করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আমিরাতে ফিরতে পারেননি। বিশেষ করে গত মার্চে দেশটির সরকার এন্ট্রি বন্ধ করে দেয়ায় ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় প্রবাসীদের। কিন্তু গত ১ জুলাই থেকে আমিরাত সরকার সবকিছু শিথিল করে দেয়ায় কর্মস্থলে ফিরতে চান এসব প্রবাসী। তবে কিছু জটিলতা দেখা দেয়ায় ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন তারা।

করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত মার্চ থেকে আরব আমিরাতে সব ধরনের এন্ট্রি বাতিল করে দেশটির সরকার। এরপর এক ঘোষণায় জানানো হয়, আমিরাতের বাইরে অবস্থান করা অভিবাসীদের সেখানে ফিরতে হলে দেশটির ‘ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেনটিটি অ্যান্ড সিটিজেনশিপের (আইসিএ) অনুমোদন নিতে হবে। সে অনুযায়ী রেসিডেন্স ভিসাধারীরা আবেদন করলেও অনুমোদন না পাওয়ায় দেশেই থাকতে হয় তাদের। অনেকে ১০-১৫ বার আবেদন করে আমিরাতে ফেরার অনুমোদন পান। তবে আইসিএর অনুমোদন ১২ আগস্ট থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে দেশটির সরকার। এর ফলে দুবাইসহ অন্যান্য প্রদেশে প্রবাসীদের ফিরে যাওয়ার যে জটিলতা ছিল তা আর এখন নেই।

প্রবাসীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, যথাসময়ে ফিরতে না পারায় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এছাড়া যারা চাকরিজীবী ছিলেন, তারা কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে নিজেদের সংকটের কথা বলেছেন।

আইসিএ অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহারের আগে আমিরাতে ফেরার জন্য দেশটির ফেডারেল অথরিটির কাছে অন্তত ১৫ বার আবেদন করেন চট্টগ্রামের মো. ইমরান। আবুধাবির একটি কোম্পানিতে কর্মরত এ অভিবাসী পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে আসেন। গত জুলাই থেকে তিনি সেখানে ফিরে যাওয়ার জন্য আইসিএর অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু কোনোভাবেই অনুমোদন পাননি।

তিনি জানান, তিন মাস দেশে থাকার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু অনুমোদন ও বিমান চলাচল না থাকায় ছয় মাস দেশে থাকতে হলো। এত দীর্ঘ সময় ধরে দেশে থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের খোঁজখবর নিতে পারিনি ঠিকমতো। তাছাড়া দেশে এসে এক প্রকার বেকার অবস্থায় ছিলাম। এতে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছি।

মো. ইমরানের মতো ছুটিতে দেশে ফেরা হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী আইসিএ অনুমোদন না পাওয়ায় দেশে আটকা পড়েছেন। যদিও বাংলাদেশীদের এসব সমস্যা সমাধানে আমিরাতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে।

প্রবাসীদের এমন সমস্যা নিয়ে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবু জাফর বলেন, প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে আমিরাতের সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। আগামী সপ্তাহে দেশটির সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের আবেদন করেছি। বৈঠকের সময় চূড়ান্ত হলে প্রবাসীদের সব ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরব।

এদিকে কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ ও উড়োজাহাজের টিকিটের জন্য হাহাকার আমিরাত থেকে ফেরা প্রবাসীদের উৎকণ্ঠায় ফেলে দিয়েছে। আইসিএর অনুমোদনের বিষয়টি উঠে যাওয়ার পর কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য শত চেষ্টা করেও টিকিট মেলাতে পারেননি অনেকেই। টিকিটের জন্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমানের অফিসে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে টিকিট প্রত্যাশীদের। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ৫০-১০০ জন টিকিট প্রত্যাশী ভিড় জমান, সেখানে এখন প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি টিকিট প্রত্যাশী ভিড় জমান।

তবে আমিরাত থেকে দেশে আসার সময় যেসব প্রবাসী রিটার্ন টিকিট কেটেছিলেন, তা নিয়েও জটিলতার কথা জানান ভুক্তভোগীরা। বাংলাদেশ থেকে রিটার্ন টিকিটে আমিরাতে ফিরতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।

গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম থেকে আমিরাতে ফিরে যাওয়া ব্যবসায়ী ছালামত উল্ল্যাহ জানান, রিটার্ন টিকিট নিয়ে আমিরাতে ফেরার সময় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ২ নং ইমিগ্রেশনে দেখালে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, রিটার্ন টিকিটে আমিরাতে ফিরে যাওয়া যাবে না। ঠিক কী কারণে রিটার্ন টিকিটে ফেরা যাবে না, তা জানতে পারেননি এ ভুক্তভোগী। তিনি জানান, কোনো উপায় না পেয়ে পরে এক ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে অনওয়ে টিকিট কেটে আমিরাতে ফিরেছি।

রিটার্ন টিকিটের বিষয়ে আমিরাতে বাংলাদেশ বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, রিটার্ন টিকিট সমন্বয় করে অবশ্যই প্রবাসীরা আমিরাতে আসতে পারছেন। তবে যদি বিমানবন্দরে কোনো প্রবাসীর সঙ্গে এ ধরনের কিছু ঘটে থাকে, তাহলে অবশ্যই ওই প্রবাসীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা উচিত।

আরো সংবাদ