স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির কথা বলায় গ্রেপ্তার করে: রায়হান

মালায়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া নারায়ণগঞ্জের ছেলে রায়হান কবীর মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

শনিবার (২২ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জের বন্দর শাহী মসজিদ এলাকায় নিজ বাসভবনে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে দেশে ফেরেন তিনি।

প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রায়হান বলেন, “প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি অন্যায়, নিপীড়নের বিরুদ্ধে ও শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির কথা বলায় মালয়েশিয়া সরকার আমাকে গ্রেপ্তার করে। তবে কোনো প্রকার মামলার চার্জশিট গঠন না করে আমাকে মুক্তি দিয়ে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ায় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।

‘আল জাজিরা টেলিভিশনে একটি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বাঙ্গালি কমিউনিটির সুবিধা বঞ্চিত প্রবাসীদের সাথে নিপিড়নসহ তাদের যৌক্তিক দাবির কথা বলেছিলাম। করোনায় লকডাউনের সময় মালয়েশিয়ায় প্রবাসী শ্রমিকদের সাথে যা ঘটেছিল। আল জাজিরা আমার নিরপত্তার জন্য ক্যামেরার সামনে মুখ ঢেকে কথা বলতে বলেছিল। আমি তো সত্য কথা বলেছি, সেজন‌্য আমি মুখ ঢাকতে রাজি হইনি। এটি আমার পার্সোনালিটির বাইরে।

‘আমি মালয়েশিয়ায় ছাত্র সংগঠনের লিডার ছিলাম। সেখানে ছাত্রদের যেসব সংগঠন ছিলো আমি সেসব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম। পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম বলে বাঙ্গালি কমিউনিটিতে আমি পরিচিত মুখ।

‘একটি এনজিও সংস্থার মাধ্যমে আল জাজিরা আমাকে খুঁজে বের করে। আমার স্বাক্ষাৎকার নেয়। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে লকডাউনের সময় বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। আমি বিভিন্ন জায়গায় ওর জন্য অনেক তদবির করছি, যেটা সবাই জানে। সেটি আমার উইক পয়েন্ট ছিলো। আমি প্রবাসী কমিউনিটিদের দাবির কথা বলে সেই সাক্ষাৎকারে বিবৃতি দিয়েছি।”

রায়হান কবীর আরও বলেন, ‘সেখানকার পুলিশ, নয়টি সংস্থা ও আইজিপি আমার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন। তারা জানতে পেরেছেন কোনো কিছুর প্ররোচনায় নয়, মূলত আমি প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করি বলেই তাদের স্বার্থে কথা বলেছি। আমি প্রবাসীদের জন্য কাজ করেছি, করছি এবং করব। প্রবাসীদের জন্য প্রয়োজনে আমি একাই লড়ব। আর এসব কারণেই সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে মালয়েশিয়া সরকার আমাকে গ্রেপ্তার করে।’

তার বাবা শাহ আলম বলেন, ‘আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আমার সন্তান আমার বুকে ফিরে এসেছে।’

উল্লেখ্য, করোনাকালে মালয়েশিয়া সরকার ‘মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার’ (এমসিও) জারি করে। গত ৩ জুলাই আল-জাজিরায় প্রচারিত ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়াস লকডাউন’ তথ্যচিত্রে বলা হয়, এ আদেশের ফলে অভিবাসী কর্মীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এতে রায়হান কবিরের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। তিনি অভিবাসীদের ওপর নিপীড়নের তথ্য তুলে ধরেন। তার এ বক্তব্যে মালয় জাতীয়তাবাদীরা ক্ষুব্ধ হয়।

গত ৮ জুলাই ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের পর ২৬ জুলাই গ্রেপ্তার করা হন রায়হান কবির। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ছাড়াও মালয়েশিয়ার মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তাকে গ্রেপ্তারের নিন্দা করে মুক্তির দাবি জানায়। ২৫ জুলাই রায়হানকে প্রথমে ১৪ দিন এবং পরে আবার ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয় মালয় পুলিশ। আল-জাজিরার কার্যালয়েও তল্লাশি চলে।

গত বুধবার (১৯ আগস্ট) তার আইনজীবী সুমিথা শান্তিনি কিশনার বরাতে ‘ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে’ জানায়, রায়হানের বিরুদ্ধে আদালতে কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।

আরো সংবাদ