স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দণ্ড কমলো!

সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত আটজনকে দোষী সাব্যস্ত করে চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন সৌদি আরবের একটি আদালত। এ রায়ে মামলার আট আসামিরই দণ্ড কমানো হয়েছে।

সোমবার পাবলিক প্রসিকিউটর সার্ভিসের বরাতে সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা (এসপিএ) জানিয়েছে, আসামিদের মধ্য পাঁচজনকে ২০ বছর করে এবং তিনজনকে সাত থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এর আগে, গত ডিসেম্বরে খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তিনজনকে ২৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন সৌদির একটি আদালত। তবে গত মে মাসে খ্যাতনামা এ সাংবাদিকের ছেলে জানান, তারা হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। ফলে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির সর্বোচ্চ সাজা আর কার্যকর হয়নি।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচক খাশোগি স্বেচ্ছা নির্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন। মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতিও পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কে প্রেমিকাকে বিয়ে করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে যান খাশোগি। কনস্যুলেটে ঢোকার পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ওই সময় খাশোগিকে কনস্যুলেটের ভেতরে সৌদি আরবের পাঠনো একদল ঘাতক হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করে তুরস্ক। এ ঘটনায় শুরুর দিকে নীরব ছিল সৌদি আরব। পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনার মুখে এক সপ্তাহ পর খাশোগি কনস্যুলেটের ভেতরে খুন হয়েছেন বলে স্বীকার করে দেশটি। তবে এখন পর্যন্ত এ সংবাদিকের মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

শুরু থেকেই সৌদি যুবরাজ সালমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন মহলের। তবে এখনও এর সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ্যে আসেনি।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে খাশোগি হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে ৩১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল সৌদি আরব। এর মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। গত বছরের শেষের দিকে যুবরাজ সালমানের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর তিনজনকে ২৪ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।

তবে খাশোগি হত্যা মামলায় সৌদির ওই রায়কে প্রহসনমূলক বলে বর্ণনা করে তুরস্ক। তাদের দাবি, প্রকৃত ঘাতকদের মামলা থেকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। হত্যা মামলার প্রধান আসামি এবং খাশোগির মরদেহ কোথায় রাখা হয়েছে সে ব্যাপারে পরিষ্কার তথ্য না দেয়ারও নিন্দা জানায় আঙ্কারা।

এছাড়া, খাশোগি হত্যাকাণ্ডে পৃথকভাবে বিচারও শুরু করেছে তুরস্ক। তারা যুবরাজ সালমানের দুই সহযোগীসহ ২০ সৌদি নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনিস ক্যালামার্ড সৌদির প্রাথমিক ওই রায়ের আগে এক প্রতিবেদনে খাশোগি হত্যার সঙ্গে সরাসরি যুবরাজ সালমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। তিনিও বলেন, ওই রায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি। এটি এক ধরনের উপহাস মাত্র।

প্যারিসভিত্তিক সাংবাদিকদের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের মতে, ওই রায়ে ন্যায়বিচারকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। এতে ন্যায় বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়নি।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও সৌদি আরবের সেই রায়ের সমালোচনা করেছিল। সংস্থাটি বলেছে, ওই বিচার এক ধরনের হোয়াইটওয়াশ ছিল। সেটি জামাল খাশোগি কিংবা তার প্রিয়জনদের জন্য ন্যায়বিচার কিংবা সত্য নিশ্চিত করতে পারেনি।

আরো সংবাদ