স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বিদেশ পাঠানোর নামে প্রত্যারণার অভিযোগে এক পরিবারের ৭ জন গ্রেপ্তার

বরিশালে একটি মানব পাচার মামলায় একই পরিবারের সাত আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সাথে বরিশাল থেকে ১৬ জনকে ভানুয়াতুতে অবৈধ পাচার মামলার আসামিদের মানব পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত না করে প্রতারণায় অভিযুক্ত করায় তদন্ত কর্মকর্তাকে স্ব-শরীরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হয়।

মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মঞ্জুরুল হোসেন মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর)  বিকেলে এই আদেশ দেন। এদিকে ওই ঘটনায় ভানুয়াতুতে চলমান মামলার বর্তমান অবস্থা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

গ্রেপ্তারি পরোনায়া জারীকৃত আসামিরা একই পরিবারের। এরা হচ্ছে: বরিশালের বাবুগঞ্জের রাহুতকাঠীর জসিম উদ্দিন, তার স্ত্রী জান্নাতুর রহমান জুথি, ভাই এনামুল হক, বাবা হারুনর রশিদ, শ্বশুড় কাজী শামসুর রহমান, শ্যালক ইমান কাজী ও ভাই পলাশ হাওলাদার।

মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী কাইউম খান কায়সার জানান, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত বরিশালের উজিরপুর, বাবুগঞ্জ ও মুলাদীর ১৬ জনকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুতে অবৈধ পাচার করে আসামিরা। প্রতিশ্রুতিতে দেশে না পাঠিয়ে ভানুয়াতুতে নিয়ে তারা তাদের অনাহারে একটি জাগায় আটকে রাখে। সেখান থেকে ১২ জন পালিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়। সে দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অবৈধ মানব পাচারের অন্যতম হোতা পলাশ হাওলদারসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার এবং অবৈধ পাচারের শিকার সকলকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ভানুয়াতুতে একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় পলাশ এখনও ভানুয়াতুর জেলে রয়েছে।

পরে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশন (আইওএম) সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ওই ১৬ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনে। পরে তারা টাকা ফেরত চাইলে মানবপাচারকারী চক্র উল্টো ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে অপহরণ, চাঁদাবাজী এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দিয়ে বিপাকে ফেলেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ১৬ জনের পক্ষে উজিরপুরের মোফাজ্জেল হোসেন বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর বরিশাল মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ওই ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

ট্রাইব্যুনাল মামলার অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেয়।

পিবিআই উপ-পরিদর্শক সাইদুর রহমান গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে দেয়া প্রতিবেদনে মানব পাচার সংক্রান্ত অপরাধ সকল অভিযোগ পাশ কাটিয়ে শুধু প্রতারণায় অভিযুক্ত করেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ট্রাইবু্যুনালে নারাজি দেন বাদী।

মঙ্গলবার ধার্য তারিখে নারাজি আবেদনের শুনানিকালে ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ৭ আসামির সকলের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে অভিযোগ গ্রহণ করে সকলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারীর নির্দেশ দেন। মানব পাঁচারের সকল উপাদান থাকার পরও এই মামলায় আইনের ব্যত্যয় ঘটানোর দায়ে ট্রাইব্যুনাল আগামী ধার্য তারিখে তদন্ত কর্মকর্তাকে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। একই সাথে ওই ঘটনায় ভানুয়াতুতে চলমান মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে পররাষ্ট্র সচিবকে চিঠি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

আরো সংবাদ