স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

চীনের মহাপ্রাচীরে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়

গত সপ্তাহজুড়ে চীনের মহাপ্রাচীরে যে দৃশ্য দেখা গেছে তা মাত্র কয়েক মাস আগেও অকল্পনীয় ছিল। হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় যেন তিল ধারণের জায়গা ছিলনা, পুরো মহাপ্রাচীরই ঢাকা পড়েছিল লোকারণ্যে। গেল ১ অক্টোবর থেকে দেশটিতে চন্দ্রবর্ষ উপলক্ষে আটদিনের জাতীয় ছুটির প্রথম দিন থেকেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে দেশটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রটিতে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহাপ্রাচীরের সাম্প্রতিক বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক পর্যটক প্রাচীরের দেয়াল ঘেঁষে যেন উপচে পড়ছে। সামাজিক দুরত্বের বালাই না করে তারা গাদাগাদি করে সেখানে ভ্রমণ করেছেন। কোন কোন ছবিতে দেখা গেছে ভীড়ের কারণে মহাপ্রাচীরের ওয়াচ টাওয়ারের সংকীর্ণ দরজা দিয়ে ঠেলাঠেলি করে সবাইকে ঢুকতে হচ্ছে। একজন আরেকজনকে চেপে ধরে যেন কোনমতে ভীড় ঠেলে এগুচ্ছেন।

সিএনএনের এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, পর্যটকদের বেশিরভাগই মুখোশ পরে থাকলেও অনেককে দেখা গেছে চিবুকের কাছে মাস্ক ঝুলিয়ে রেখছেন। কারও কারও মুখে একদমই কোন মাস্ক ছিলনা। সিএনএন জানিয়েছে এ সময়টা চীনাদের ভ্রমণের আদর্শ সময়। তাই আট দিনের জাতীয় ছুটি থাকায় করোনা মহামারির ঝুঁকির মধ্যেও তারা বেরিয়ে পড়েছে।

দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গরমকালের পর থেকে সেখানে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমেছে। গেল জুনে বেইজিং-এ কয়েকটি গুচ্ছ সংক্রমণসহ প্রাদুর্ভাবের ঘটনা ঘটেছিল। তবে কঠোর লকডাউন এবং গণ পরীক্ষার মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

সেখানে আক্রান্তের হার প্রায় শূন্য নেমে আসায় ছুটিতে বাস স্টেশন, বিমানবন্দর এবং ট্রানজিট হাবে দেখা গেছে পর্যটকদের ভীড়। এদিকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পর্যটকদের আকর্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ভ্রমণ ভাউচার এবং বিনামূল্যে বা ডিসকাউন্টে টিকেট প্রদান করা হচ্ছে।

পর্যটকদের ভীড়ের সামলাতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে মহাপ্রাচীর কর্তৃপক্ষ। প্রাচীরের সবচেয়ে জনপ্রিয় অংশ — বাদালিং গেল মার্চের শেষের দিকেই পুনরায় খুলে দেয়া হয়।

সিএনএন আরও জানায়, গেল ২৯ সেপ্টেম্বর বাদালিং স্পেশাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিজিওন অফিস- ছুটির এই মৌসুমে স্বাস্থ্য বিধি-নিষেধ মেনে চলতে পর্যটকদের নির্দেশনা দিয়ে সতর্ক করেছিল। এই বিধিনিষেধগুলির মধ্যে একে অপরের মধ্যে এক মিটার দূরত্ব রাখা, একসাথে কোথাও জড়ো হয়ে জটলা না পাকানো, অবশ্যই মাস্ক পরিধান করা, এবং মহাপ্রাচীরের কর্মীদের দেয়া স্বাস্থ্য নির্দেশিকা এবং ব্যবস্থাপনা মেনে চলা।

তবে দেখা গেছে এই সপ্তাহে এইসব নিষেধাজ্ঞার কোনটিই অনুসরণ করেননি পর্যটকেরা। জানা গেছে, মার্চে যখন মহাপ্রাচীরের বাদালিং বিভাগটি পুনরায় খোলা হয়, তখন পর্যটকের প্রবেশের সংখ্যা স্বাভাবিকের ধারণ ক্ষমতার ৩০% রাখা হয়েছিল। তবে গোল্ডেন উইক বা চন্দ্রবর্ষ উদযাপনের আগে কর্তৃপক্ষ এই নীতি পরিবর্তন করে স্বাভাবিক ক্ষমতার ৭৫% বেশি পর্যটককে টিকেট প্রদান করেছে। অর্থাৎ দৈনিক ৪৮,৭৫০ জন পর্যটককে সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রপরিচালিত সংবাদ সংস্থা জিনহুয়া জানিয়েছে, গেল ৩ অক্টোবর সকালের প্রথমভাগের মধ্যেই বাদালিং বিভাগের টিকেট সব বিক্রি হয়ে যায়।

সাধারণত গোল্ডেন উইকের ছুটিতে মধ্যবিত্ত চীনারা বিদেশ ভ্রমণে যান। তবে এই বছর, ভিসা নিষেধাজ্ঞা, কোয়ারান্টাইন ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় নিজেদের পর্যটনকেন্দ্রেই ভ্রমণে বাধ্য হয়েছেন।

আরো সংবাদ