স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

করোনায় আক্রান্ত তথ্যমন্ত্রী, ভর্তি হলেন হাসপাতালে

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) দিনগত রাতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তাঁর করোনা পজিটিভ রেজাল্ট আসে।

তথ্যমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আকরাম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, তথ্যমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত হলেও শারীরিক অবস্থা ভালো আছেন। তিনি সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

স্কুল জীবনেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়া তৃণমূলের নেতা হাছান মাহমুদ সফল নেতৃত্বের মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ঈর্ষণীয় অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।

১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স করা এই রাজনীতিক দেশে-বিদেশে মোট তিন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী ও পরিবেশ রসায়নে পিএইচডি ইন সায়েন্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করা হাছান মাহমুদ ১৯৯৬ সালে বেলজিয়ামের ভ্রীজে ইউনিভার্সিটি অব ব্র্যাসেলস থেকে হিউম্যান ইকোলজি (পরিবেশ বিজ্ঞান) বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। একই সালে বেলজিয়ামের আরেক নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব লিবহা দু ব্রাসেলস থেকে ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি।

২০০১ সালে বেলজিয়ামের লিম্বুর্গ ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাম থেকে পরিবেশ রসায়ন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন দেশের বর্তমান সময়ের মেধাবী রাজনীতিক ড. হাছান মাহমুদ। ১৯৯৩ সালে ব্রিজে ইউনিভার্সিটির সমস্ত বিদেশী ছাত্রদের স্টুডেন্ট ফোরাম ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ভিইউবি’র প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পাশাপশি নির্বাচিত হন বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এসময় ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।

ছাত্রজীবনে তিনি প্রথমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম শহরের জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৮ সালের শেষার্ধে চট্টগ্রাম সরকারী ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৮১ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। পরে ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তুখোর বক্তা হাছান মাহমুদ। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে নব্বই দশকের শুরুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য বিপুল বিজয় লাভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে সেই নিবার্চনে প্রার্থী হতে না পারলেও তিনিই ছিলেন সমস্ত প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান। আশির দশকের শুরুতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন হাছান মাহমুদ। ১৯৯২ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য মনোনীত হন হাছান মাহমুদ।

২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী জরুরি অবস্থায় যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে সামরিক সমর্থিত সরকার গ্রেপ্তার করে তখন ড. হাছান মাহমুদ দলীয় সভাপতির মূখপাত্র হিসেবে অকুতোভয়ে কাজ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কারারুদ্ধ শেখ হাসিনার পক্ষে গণমাধ্যমে সরব ভূমিকা পালন করে দেশজুড়ে পরিচিতি পান। তখন থেকেই তাঁর সাহসী ভুমিকা দলের সকল কর্মী ও সমর্থকদের কাছে প্রশংসিত হয়ে আসছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত ড. হাছান মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করছেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে। এর আগে পরিবেশ বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ স্টাডিস বিষয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন তিনি। ইউরোপীয়ান ইনস্টিটিউট ফর স্ট্রেটেজিক স্টাডিস, ব্রাসেলস, বেলজিয়ামে ভিজিটিং ফেলো এবং একাডেমিক বোর্ড মেম্বার হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন হাছান মাহমুদ।

চট্টগ্রামের খ্যাতিমান আইনজীবী প্রয়াত নুরুচ্ছফা তালুকদারের জ্যেষ্ঠ সন্তান ড. হাছান মাহমুদের জন্ম ১৯৬২ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামে। তার বাবা চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং দুই মেয়াদে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাবলিক প্রচিকিউটর ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে ড. হাছান মাহমুদ দুই কন্যা ও এক ছেলের জনক। রাজনীতি ও সামাজিক জীবনে অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে আজকের অবস্থানে উঠে এসেছেন তিনি।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার মৌলবাদী অপশক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমনকি কয়েকবার তার প্রাণনাশেরও চেষ্টা চালিয়েছিল মৌলবাদি গোষ্ঠি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা। ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। এখনো তার শরীরে ৪০টির মতো স্প্রিন্টার সে হামলার দুঃসহ স্মৃতি বহন করে চলছে। কিন্তু কোনও রক্তচক্ষু হাছান মাহমুদকে তার সংগ্রামের পথ থেকে পিছু হটাতে পারেনি। ড. হাছান মাহমুদের মতো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধার বহুমাত্রিক সমন্বয় বর্তমান সময়ে খুব কম সংখ্যক রাজনীতিবিদের মাঝে দেখা যায়।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ আসনে বিএনপির তৎকালীন হেভিওয়েট নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন হাছান মাহমুদ। এরপর প্রথমে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং ৬ মাস পর পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী এবং তিন বছরের মাথায় এই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ড. হাছান মাহমুদ।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন এই আসন থেকে। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ সংসদীয় আসনে পুনরায় হ্যাট্রিক বিজয় অর্জন করেন হাছান মাহমুদ।

এরপর দ্বিতীয়বারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন ড. হাছান মাহমুদ। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বন পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপরিত দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এর আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশে ফিরে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এরপর ২০০১ সালের অক্টোবরে যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে। অল্পদিনের মধ্যেই ২০০২ সালে আওয়ামীলীগের সম্মেলনে তিনি দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সে দায়িত্ব পালন করেন ড. হাছান মাহমুদ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামীলীগ সভানেত্রীর বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন বিশ্বস্ততার সাথে। এরপর ড. হাছান মাহমুদ পরপর দুই কমিটিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন দক্ষতার সাথে। বর্তমানে যুগ্ম সম্পাদকের পাশাপাশি দলের অন্যতম মূখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আরো সংবাদ