স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

দাফনের সময় নড়ে উঠা সেই শিশুর মৃত্যু!

দাফনের সময় নড়ে উঠা সেই শিশু মরিয়ম মারা গেছে। বুধবার (২১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ওই শিশুর বাবা ইয়াসিন বুধবার রাত ১২ টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তার মেয়ে ঢাকা মেডিকেলের এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল। মরিয়মকে রায়ের বাজার কবরস্থানে দাফন করা হবে।

এর আগে গত শুক্রবার ভোরে ঢামেকের গাইনি বিভাগে শাহিনুর বেগম নামের এক গৃহবধূ কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। চিকিৎসকরা জানান বাচ্চাটির মৃত অবস্থায় জন্ম হয়েছে। গৃহবধূর স্বামী ইয়াসিন জানান, এরপর হাসপাতালের আয়া বাচ্চাটিকে প্যাকেট করে বেডের নিচে রেখে দেন এবং কোথাও নিয়ে দাফন করার জন্য বলেন। রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কবর খোঁড়া যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে, তখন কান্নাকাটি শব্দ শুনতে পান তিনি। আশপাশে কোথাও কিছু না পেয়ে পরে পাশে রাখা নবজাতকটির দিকে খেয়াল করেন। এরপর প্যাকেট খুলে দেখেন বাচ্চাটি নড়াচড়া করছে, কান্নাকাটি করছে।

এরপরই তাকে দ্রুত আবার ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন এবং তাকে চিকিৎসকরা দেখে পরে নবজাতক বিভাগে ভর্তি করেন বলে জানান তার বাবা। পরিবার শিশুটির নাম রেখেছে মরিয়ম।

মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, তবে চিকিৎসকসহ সবারই চেষ্টায় কোনো ঘাটতি ছিল না।

ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘শাহিনুর বেগম নামে ওই রোগীকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখনই তার কন্ডিশন ভালো ছিল না। ধীরে ধীরে তা আরও খারাপের দিকে চলে যায়। এরপর চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা চালায়। বাচ্চাটি ২৬ সপ্তাহের অপরিণত বয়সে ভূমিষ্ঠ হয়। মায়ের গর্ভে ২৮ সপ্তাহ পার হলে বেঁচে থাকার মতো পরিপূর্ণ বয়স পায়। তবে এই বাচ্চাটি স্বাভাবিক অবস্থায় জীবিত থাকার আগের বয়সেই ভূমিষ্ঠ হয়েছে।’

নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর চিকিৎসক ও নার্স নিয়ম অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে নবজাতকটির সাইন অব লাইফ পায়নি। ঘণ্টাখানেক অবজারভেশনেও রাখা হয় নবজাতকটিকে। এরপরই মৃত ঘোষণা করে স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘এরপরও ৪/৫ ঘণ্টা নবজাতকটি তাদের কাছেই ছিল। পরে দাফনের জন্য নিয়ে গেলে সেখানে নড়েচড়ে উঠলে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বিষয়টি জানার পর দ্রুত এনআইসিইউ ম্যানেজ করে সেখানে রাখা হয় তাকে। ঘটনার পরপরই বিষয়টি তদন্তের জন্য চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটিই আজ তাদের তদন্ত প্রতিবেদন ও কিছু সুপারিশ করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে জন্মের পর নবজাতকটির কোনো সাইন অব লাইফ ছিল না। এটি একটি রেয়ার (বিরল) ঘটনা। তবে চিকিৎসকদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। মা ও মেয়ে দুজনকেই বাঁচানোর চেষ্টা ছিল তাদের।’

ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘আনফরচুনেটলি এমনটি হয়েছে। তবে এখানে চিকিৎসকদের ব্যর্থতা রয়েছে। যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আদালতে রিটও হয়েছে। সেখান থেকে আরও যদি তদন্ত করার বিষয় আসে, তাহলে সেটিও করা হবে। বিশ্বে অনেক দেশেই এমন ঘটনা হয়েছে। এটি একটি ইম্যাচিউরড বেবি ছিল। এমন ঘটনা ইম্যাচিউরড বেবি, সাপেকাটা রোগী, বিদ্যুৎস্পৃষ্টের রোগীর ক্ষেত্রে ঘটে।’

আরো সংবাদ