স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

সৌদির ফাহাদ ক্যাম্প যেন এক টুকরো বাংলাদেশ

প্রায় ২০০ স্থায়ী দোকান আছে। তবে শুক্রবার সেখানে বসে আরও অন্তত ৩০০টি অস্থায়ী দোকান। অধিকাংশ দোকানের মালিক প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

প্রথমে দেখলে মনে হতে পারে, এটি বাংলাদেশের কোনো একটি মফস্বল শহরের হাট। তবে বাস্তবে জায়গাটি সৌদি আরবের মদিনা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে, পাহাড় ও সবুজে ঘেরা ফাহাদ ক্যাম্প।

এই ক্যাম্প ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি বাজার। এতে প্রায় সব ধরনের বাংলাদেশি পণ্য পাওয়া যায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার মদিনার আশপাশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা তো বটেই, ভারতীয় ও পাকিস্তানিরাও এখানে ছুটে আসেন।

পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠান ফাহাদ ক্যাম্পে কর্মরত আছেন প্রায় সাত হাজার বিদেশি শ্রমিক, তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। আর এই শ্রমিকদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বাজারটি। সেখানে প্রায় ২০০ স্থায়ী দোকান আছে। তবে শুক্রবার সেখানে বসে আরও অন্তত ৩০০টি অস্থায়ী দোকান। অধিকাংশ দোকানের মালিক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কোম্পানির কাছ থেকে মাসিক ২০০ সৌদি রিয়াল ভাড়ায় নেয়া দোকানে ব্যবসা করেন তারা।

হরেক পণ্যের দোকান

এখানে তমিজ উদ্দিনের মসলা পানের বেশ কদর। এই পান খেতে আসেন প্রবাসী বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানিরা।

ফাহাদ ক্যাম্পে বসবাসরত  বাড়ি গাজীপুরে। তিনি বলেন, ভোর চারটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোম্পানির নির্ধারিত ডিউটি শেষে তিনি দোকানে এসে বসেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি বাহারি মসলার সুস্বাদু পানের জন্য তার দোকানের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।

সারা সপ্তাহ ক্যাম্পের লোকজন থাকলেও শুক্রবার মদিনার শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন ক্রেতারা। শুক্রবার মুখর হয়ে ওঠে এই বাজার। রেস্তোরাঁগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। ভেতরে বসার স্থান খালি থাকে না। দোকানিরা বারান্দায় চেয়ার টেবিল পেতে আরও কিছু মানুষের বসার ব্যবস্থা করেন।

এই বাজারে জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক কম। এ কারণে দিন দিন বাজারটি জমজমাট হচ্ছে। নতুন পণ্যের পাশাপাশি নিত্য ব্যবহারের অনেক পুরোনো জিনিসপত্র পাওয়া যায় এই বাজারে।

ঝিনাইদহের সাইদ হোসেন বলেন, তিনি মদিনা শহরে থাকেন। কিন্তু প্রতি শুক্রবার এই বাজারে আসেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার পাশাপাশি স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন। বসে গল্পগুজব করেন। প্রবাস জীবনের সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি করেন।

দেশীয় তরি-তরকারি থেকে শুরু করে সব কিছুই পাওয়া যায় এই বাজারে। এখানে ২৫-৩০টি মুদির দোকান আছে। এসব দোকানে চা-পানও পাওয়া যায়। সাধারণ পান ছাড়াও এখানে ৪০ রকম মসলা দিয়ে বানানো হয় বিশেষ ধরনের মিষ্টি পান। প্রতিটি সাধারণ পান ২ রিয়াল (৪৫টাকা) এবং মসলা পান ৫ রিয়াল (১১০টাকা) করে বিক্রি হয়।

প্রবাসীদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে এখানে গড়ে উঠেছে অডিও-ভিডিও সিডি, ভিসিডি ও ক্যাসেটের দোকান।

সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্যের জন্য প্রসিদ্ধ নোয়াখালীর আমিনুর রহমানের দোকান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ইলেকট্রনিকস ও বাসায় ব্যবহারের কিছু জিনিসপত্র নতুন কিনতে গেলে অনেক দাম পড়ে। কিন্তু তার দোকানে কম দামে সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য বিক্রি করেন। এতে তারও লাভ, ক্রেতাদেরও।

কেনাকাটা ছাড়াও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বন্ধুবান্ধুব আর স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার একটি আদর্শ স্থান এই ফাহাদ ক্যাম্প; এক টুকরো বাংলাদেশ।

আরো সংবাদ