স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

শাহ আমানত বিমানবন্দর : মধ্যপ্রাচ্যগামী ভিজিট ভিসার যাত্রীরা ‘কন্ট্রাক্টের’ ফাঁদে

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের বিরুদ্ধে ‘কন্ট্রাক্ট (যোগাযোগ) বাণিজ্য’ ও যাত্রী হয়রানিসহ নানা অভিযোগের পাহাড় জমেছে।

মধ্যপ্রাচ্যগামী ভিজিট ভিসার যাত্রীদের ‘কন্ট্রাক্টের’ ফাঁদে ফেলে ইমিগ্রেশন পুলিশ প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকা ছাড়া কাউকে গন্তব্যে যেতে দেয়া হচ্ছে না। গুটিকয়েক ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ভিজিট ভিসার যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। ব্যাপারটি আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীরা জানান, বর্তমানে ইমিগ্রেশন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের (কন্ট্রাক্ট) মাধ্যমেই ৯৫ শতাংশ ভিজিট ভিসার যাত্রী গন্তব্যে যাচ্ছেন। যারা কন্ট্রাক্ট করছেন না, তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে।

৮ ডিসেম্বর ভিজিট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে গেছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা এলাকার বাসিন্দা আরমান। তার খালাতো ভাই নুর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এর আগে এক মাসে আরও দু’বার দুবাই যাওয়ার চেষ্টা করেছেন আরমান। দু’বারই বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। ১ লাখ টাকায় কন্ট্রাক্ট করায় তৃতীয়বার আরমান দুবাই যেতে পেরেছেন।

ইমিগ্রেশন পুলিশ বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিসহ দালালের মাধ্যমে টাকা নেয়। তিনি আরও বলেন, ভিজিট ভিসার যাত্রীদের মধ্যে যারা কন্ট্রাক্ট করেন তাদের তালিকা পৌঁছে যায় ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে। এরপর তাদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে ইমিগ্রেশন পুলিশ এবং তাদের গন্তব্যে যেতে দেয়া হয়।

রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি নাহিদ হোসেন ডিসেম্বরে ভিজিট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যে গেছেন। প্রথম দু’বার তাকে ফেরত পাঠিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

তার স্বজনরা জানান, ৬০ হাজার টাকার কন্ট্রাক্টে তৃতীয়বার তিনি যেতে পেরেছেন। ১৮ ডিসেম্বর রাউজান উপজেলার বাসিন্দা দুই ভাই ওসমান ও আরফাত ভিজিট ভিসায় দুবাই গেছেন। স্বজনরা জানান, জনপ্রতি ৬০ হাজার টাকা করে কন্ট্রাক্টে তারা প্রথমবারেই যেতে পেরেছেন।

রাউজান নোয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. ইদ্রিস বলেন, ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিটের সঙ্গে কন্ট্রাক্টের টাকাও নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে দুবাইয়ের সাধারণ শ্রেণির বিমানের ভিজিট ভিসার রিটার্ন টিকিট ৭০-৮০ হাজার টাকা। কন্ট্রাক্টসহ ট্রাভেল এজেন্সিগুলো নিচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

কন্ট্রাক্ট বাণিজ্য ভিসা, টিকিটের মতো হয়ে গেছে। ভিসা-টিকিট না থাকলে যেমন বিদেশ যাওয়া যায় না, তেমনি এখন ভিসা-টিকিট থাকলেও ইমিগ্রেশন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ না করলে বিদেশ যাওয়া যায় না।

ভিজিট ভিসার যাত্রীদের নিয়ে রমরমা বাণিজ্য চললেও তা যেন দেখার কেউ নেই। সম্প্রতি শাহ আমানতসহ দেশের বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে দুবাই কনসাল জেনারেলের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে দুবাইয়ে প্রবাসী ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন।

দুবাইয়ে কর্মরত সাংবাদিক নাসিম উদ্দিন আকাশ বলেন, করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। ভিজিট ভিসায় এসে যোগ্যতা অনুযায়ী শ্রমিকের ভিসা লাগানোর সুযোগ আছে। কিন্তু শাহ আমানত বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের কারণে এ সুযোগ হাতছাড়া হতে চলেছে। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় আমিরাতের শ্রমবাজার অন্য দেশের দখলে চলে যাবে। তিনি আরও বলেন, যেসব ভিজিট ভিসার যাত্রী কন্ট্রাক্ট করছেন, শুধু তাদের আসতে দেয়া হচ্ছে।

এ সম্পর্কে সিএমপির বিশেষ শাখার উপপুলিশ কমিশনার আবদুল ওয়ারিশ বলেন, বিমানবন্দর সিএমপির মধ্যে হলেও ঢাকার বিশেষ শাখা থেকে এটি নিয়ন্ত্রিত হয়। এ কারণে কেউ অভিযোগ করলেও সিএমপি থেকে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করতে পারি।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ম্যানেজার উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন খান বলেন, ভিজিট ভিসায় কারা বিদেশে যেতে পারবে-এ বিষয়টি দেখভাল করছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও দেয়া আছে। ইমিগ্রেশন শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, যোগাযোগের পর (কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে) ভিজিট ভিসার যাত্রীদের যেতে দেয়া হচ্ছে-এমন অভিযোগ ঠিক নয়। কাগজপত্র সব ঠিক থাকলে কোনো যাত্রীকে আটকানো হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও যারা ভিজিট ভিসায় দেশের বাইরে যেতে পারছে না, তাদের সরাসরি অভিযোগ জানাতে বলেছেন। ১৭ ডিসেম্বর হাটহাজারী উপজেলার ছিপাতলী ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন ও পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

আরো সংবাদ