স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

ফ্লাইট বাতিলের হিড়িক : এভিয়েশন খাতে ফের ছন্দপতন

নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সন্ধান মেলায় ফের শঙ্কার ছায়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। আগের ভাইরাসের চেয়ে ৭০ গুণ দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস। মূলত যুক্তরাজ্য থেকে এই ভাইরাস ছড়ানোর কারণে সে দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিল করছে বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশ এখনো যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট চালু রাখলেও এরই মধ্যে ৪০টি দেশ তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে।

করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরব, ওমান ও কুয়েত ইতোমধ্যে তাদের সব ফ্লাইট বাতিলের পাশাপাশি সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও বাতিল করেছে। বাংলাদেশ বিমানও এই তিনটি দেশের সঙ্গে তাদের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে।

এর ফলে অন্যান্য দেশও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের পথে হাঁটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যার কারণে বিমান খাতে নতুন করে আবার ধাক্কা লেগেছে।

অপরদিকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের বিষয়ে মঙ্গলবার আলোচনায় বসে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এখনই ফ্লাইট বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বরং স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা যুক্তরাজ্য থেকে আসবেন তাদের জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

এরই মধ্যে বিদেশ থেকে যেসব যাত্রী বাংলাদেশে আসছেন তাদের করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া করোনা সনদ ছাড়া কয়েকটি বিমান দেশে যাত্রী বহন করেছে যার ফলে সেসব বিমানকে জরিমানাও করা হয়েছে।

২২ ডিসেম্বর বিকেলে লিবিয়া থেকে ১৫৩ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করে বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইট। কিন্তু সব যাত্রীর করোনা সনদ না থাকায় বিমানটিকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ যাত্রী এনে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে। একই সঙ্গে যাত্রীকেও ৩ হাজার টাকা জরিমানা এবং হাসপাতালে পাঠানো হয়।

১৪ ও ১৫ ডিসেম্বরও সৌদি এয়ারলাইনসে করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী আসে বাংলাদেশে, ফলে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় বিমানটিকে। ১৩ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ যাত্রী আনায় এয়ারএশিয়াকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানও করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী আনায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ১০ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী আনায় মালদ্বীপ এয়ারলাইনসকে ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অপরদিকে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেন বিমানবন্দরের পরিচালক। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। ফলে করোনা নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

অপরদিকে, বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমাদের যে ক্ষতি হয়েছিল সেটা আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে আবার করোনাভাইরাসের নতুন আক্রমণ আমাদের শঙ্কায় ফেলে দিল। কী হবে সামনে আর কতটুকু ক্ষতি হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আবারো আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছি, আর এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

এ বিষয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের জনসংযোগ (জিএম) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, নতুন করোনাভাইরাসের শঙ্কা আমাদের তাড়া করছে। কোনোভাবে আমারা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু নতুন করোনাভাইরাস আমাদের শঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিল। কী হবে সামনে বুঝতে পারছি না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল এভিয়েশন যা সিদ্ধান্ত দেয় আমরা সেভাবেই চলব। হঠাৎ করে করোনার নতুন ধরন আমাদের হতাশ করেছে।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ উল আহসান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের যেভাবে চলতে বলবে আমরা সেভাবেই চলব। তবে নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এখন আমাদের সবার প্রধান কাজ।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল এভিয়েশন) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেছেন, নতুন কোনো নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হচ্ছে না। নতুন নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমরা প্রশমনের ব্যবস্থা নিয়েছি। যেমন যুক্তরাজ্য থেকে যারা আসবে তাদের আলাদাভাবে স্ক্রিনিং করা হবে। আর এ বিষয়ে ডাক্তার ও ইমিগ্রেশনে যারা আচেন সবাইকে অবগত করা হয়েছে। আর যুক্তরাজ্য থেকে যারা আসবে তাদের একটি তালিকা বিমানগুলোকে আগেই আমাদের দিতে বলা হয়েছে। আর এটা দেখেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে প্রথমবারের মতো সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করলে বিভিন্ন দেশ তাদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো বন্ধ ঘোষণা করে।

আরো সংবাদ