স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

জাপানের রাস্তায় নামছে ‘ডেলিভারি-রোবট’

ভাবুন তো, স্মার্টফোনটি দিয়ে মিনিট কয়েক আগে কফি অর্ডার করেছেন আর তা পৌছে দিতে কোন মানুষ নয়, দরজায় কড়া নাড়ছে রোবট!

কল্পনা নয়, এমন দৃশ্য এবার সত্যিই হয়ত কিছুদিনের মধ্যে বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। জাপানের একটি কোম্পানি ইতোমধ্যে রাস্তায় রাস্তায় স্বয়ংক্রিয়ভাবেচালিত রোবট দিয়ে ডেলিভারি বা পণ্য সরবরাহের পরীক্ষা চালাচ্ছে। করোনা মহামারীতে সামাজিক দূরত্বের দিকটি বিবেচনা করার পরই এভাবে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে পণ্য ও খাদ্যসামগ্রী সববরাহের বিষয়টি সামনে আসে।

জাপান পোস্ট গত সেপ্টেম্বরে টোকিওর রাস্তায় একটি স্বয়ংক্রিয় মেইল সরবরাহকারী রোবটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করে। এই প্রোটোটাইপটি ৩০ কেজি পর্যন্ত বহন করতে পারে এবং ঘন্টায় ৬ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে যা সাধারণ হাঁটার গতির চাইতেও কিছুটা বেশি। মানুষের মত এই খুদে যন্ত্রমানবটিও লাল ট্রাফিক লাইট কিংবা পথচারী ও গাড়ি সামনে চলে এলে থেমে যাবে; ভিতরে আগে থেকেই ফিট করা আছে ক্যামেরা (বিল্ট-ইন) এবং সেন্সর ।

রিমোট মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে দূর থেকেও এদের পরিচালনা করা সম্ভব কিনা সেটি পর্যবেক্ষণ করাই আপাতত এসব পরীক্ষামূলক ট্রায়ালের মূল লক্ষ্য।

ইলেকট্রনিক জায়ান্ট প্যানাসনিকও এই স্বয়ংক্রিয় সরবরাহের প্রতিযোগিতায় যুক্ত হয়েছে। কোম্পানিটি টোকিওর বাইরে ফুজিসাওয়াতে নিজেদের অংশীদারিত্বে নির্মিত টেকসই স্মার্ট টাউনের রাস্তায় রোবটের ট্রায়াল সম্পন্ন করছে। নির্ধারিত কিছু স্টপেজে থেমে , মুদিসামগ্রী গ্রহণ করে তা আবার নির্দিষ্ট স্থানে পৌছে দিতে পারবে- এমন পরিকল্পনা করেই রোবটগুলোকে নির্মাণ করা হয়েছে। প্যানাসনিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে , সামনে আরো বড় পরিকল্পনা করা হচ্ছে যেন রোবটগুলো পৃথক পৃথকভাবে গ্রাহকের বার্তায় সাড়া দিতে পারে।

শুধুই প্রযুক্তি কোম্পানি নয়, ই-কমার্স জায়ান্ট রাকু’য়েনও গত মাসে কানাগাওয়ার ইয়োকোসুকা শহরে ডেলিভারি রোবটের ট্রায়াল শুরু করেছে। এ শহরে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকের বাস। তাদের ভরসা যে, এই রোবটগুলো তাদের জীবনযাত্রা সহজ করে তুলবে; প্যাঁচানো রাস্তাঘাট এবং খাড়া বাঁক পেরিয়ে তাদের আর প্রতিদিন দৈনন্দিন সামগ্রী আনতে যেতে হবে না।

জাপানি সরকারও এই প্রচেষ্টাকে পুরোপুরি সাধুবাদ জানিয়েছে; কর্তৃপক্ষ এসব স্বয়ংক্রিয় রোবটের চলাচল সহজতর করার চিন্তাভাবনা করছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপানের রাস্তায় এসব রোবটের ছোটাছুটি নিত্যনৈমিত্তিক দৃশ্যে পরিণত হবার আগে দুটো চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা প্রয়োজন। একটি হলো নিরাপদ ট্রাফিক। রিমোট সেনসিং বা দূরবর্তী পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে রোবটগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে ফলে এসব যন্ত্রপাতিতে ঠাসা রোবটদের পদচারণে টোকিওর রাস্তা রঙিন হবার আগে নিয়ন্ত্রকবৃন্দ অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছেন।

দ্বিতীয় বাধাটি অবধারিতভাবেই এর খরচ। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র একেকটি রোবটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণেই অনেক বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত থাকতে হচ্ছে।

বড় পরিসরে পরিচালিত এসব ট্রায়ালের পেছনে তাই খরচের মাত্রাটাও অত্যধিক।

তবে যাই হোক, প্যানাসনিক এবং রাকু’য়েনের মতো কোম্পানিগুলোর আশা এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা গেলে কয়েক বছরের ভেতরেই স্বয়ংক্রিয় পণ্য সরবরাহকারী রোবটের বেশ ভাল বাজার তৈরী হয়ে যাবে। শোনা যাচ্ছে, প্রায় একই রকমের রোবটের ব্যবহার ইতিমধ্যেই ইউরোপের কিছু অংশে সবুজ সংকেত পেয়ে গেছে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চায়নাতেও ট্রায়াল চলছে।

জাপান সরকার নতুন বছরে নতুন উদ্যমে প্রতিযোগিতার মাঠে নামতে ইচ্ছুক। প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন বা পুরনো আইনের সংশোধন করেই হোক, তাঁরা এবার আরো বেশি কোম্পানীকে এই খাতে যুক্ত হবার জন্য উৎসাহিত করবে। ২০২০ এর মহামারী ২০২১ এ শেষ পর্যন্ত যে দশায়ই গড়াক, নতুন বছরটি যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত ডেলিভারি রোবটের বছর হতে যাচ্ছে সে আশা করতে ক্ষতি কী!

সূত্রঃ এনএইচকেওয়ার্ল্ড-জাপান

আরো সংবাদ