স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে অলস ‘পড়ে আছে’ ৭০০ কোটি টাকা

বিদেশে যারা কাজের উদ্দেশে যেতে চায় তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য প্রথম দফায় ২০০ কোটি, পরে আরেক দফায় ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঋণ প্রদান প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ঋণ প্রদানের নানা জটিলতায় তহবিলটি এখনও অলস পড়ে আছে ব্যাংকটিতে।

সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে যখন লকডাউন জারি করা হয়েছিল, তখন প্রবাসীদের কেউ কেউ কাজ না থাকায় ছুটি কাটাতে দেশে ফিরেছিলেন। তাদের অনেকেই ভেবেছিলেন হয়ত কয়েক মাসের মধ্যে সব স্বাভাবিক হবে। কিন্তু মহামারীর প্রকোপ না কমায় সঠিক সময়ে ফিরতে পারেননি অনেকে। এতে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, কারও ফুরিয়েছে ভিসার মেয়াদ। এদের মধ্যে অনেকের জমানো টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় বিদেশে যাওয়ার খরচ মেটাতে পারছেন না।

তাদের কথা বিবেচনা করে এবং নতুন যারা কাজের উদ্দেশে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক তাদের কথা মাথায় রেখে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে দুই দফায় ৭০০ কোটি টাকার তহবিল করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই তহবিলের ঋণ সুবিধা গ্রহণে ইচ্ছুক বিদেশগামীদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না সংস্থাটি।

এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তহবিলটি গঠনের পর প্রথম দফার ২০০ কোটি টাকার মধ্যে ১৫ কোটি টাকা আর দ্বিতীয় দফার ৫০০ কোটির মধ্যে ২৫০ কোটি টাকা পেয়েছে ব্যাংকটি। আর ঋণ প্রদান করা হয়েছে ৩৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাইগ্রেশন শাখার কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মহানগর নিউজকে বলেন, তহবিলটি থেকে ঋণ প্রদানে শুরুতে কিছু জটিলতা ছিল। তবে তিন দফায় ঋণ নীতিমালা অনেকটাই সহজ করা হয়েছে। যারা ঋণের আবেদন করেছেন তাদের কাউকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।

কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা না দেওয়ায় কিছু ঋণ আবেদন বাতিল হয়ে যায় উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, গত তিন থেকে চারদিন ধরে আমাদের ঋণ প্রদান কার্যক্রম দ্রুত করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রান্তিক অঞ্চল ও বিভাগীয় শহর থেকে যারা বিদেশ যাওয়ার জন্য ঋণ নিতে চায় তারা এ ব্যাংকটির সহায়তা থেকে নানা কারণে বঞ্চিত। ব্যাংকটির বিভাগীয় শহরের কার্যক্রম সম্পর্কে অনেক বিদেশগামীর সম্যক কোনো ধারণাই নেই।

আলাপকালে বাঁশখালীর মুজিবুর রহমান জানান, প্রবাসীদের কল্যাণে সরকারের এ ধরনের কোনো সুবিধার বিষয়ে আমি জানতামই না। জানলে আমার বন্ধকী ভিটে-মাটি হারানোর উপক্রম হতো না। আমি বেসরকারি একটি ব্যাংকে উচ্চ সুদের হারে ভিটে-মাটি বন্ধক রেখে বিদেশ গিয়ে এখন বিপদে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পরিশ্রমী এসব মানুষের কথা ভেবেই মাত্র চার শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার জন্য সরকার এ তহবিল করেছিল। কিন্তু ব্যাংকটির যথেষ্ট লোকবল এবং অবকাঠামোর অভাবে টাকাগুলো এই মুহূর্তে বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এটা নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

আরো সংবাদ