স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

ট্র্যাভেল এজেন্সির শাখা খোলা যাবে, জাতীয় সংসদে বিল পাস

ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোর মালিকানা হস্তান্তর এবং দেশ-বিদেশে শাখা খোলার সুযোগ দিতে বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে জাতীয় সংসদ।

২০১৩ সালের এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের জন্য সোমবার ‘বাংলাদেশ ট্র্যাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) বিল-২০২০’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

গত ৭ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে তোলেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। পরে সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলটি পাস হওয়ায় এখন ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশে-বিদেশে শাখা অফিস খুলতে পারবে।

বর্তমানে কোনো অপরাধের জন্য ট্র্যাভেল এজেন্সিকে জরিমানা করার সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষ তাদের নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল করে। পাস হওয়া বিলে জরিমানার সুযোগ রাখা হয়েছে।

ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো যৌক্তিক কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন করতে না পারলে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে জরিমানা দিয়ে আবেদন করতে পারবে।

বর্তমান আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন না করলে ট্র্যাভেল এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যেত।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে ছয় মাস জেল, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হবে।

অনুমোদন ছাড়া কোন ট্র্যাভেল এজেন্সি ঠিকানা পাল্টাতে পারবে না, সেই শর্তও দেওয়া হয়েছে সংশোধিত আইনে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, “আইনটি অনুমোদত হলে নবায়ন আবেদন দাখিলে বিলম্বের ও অপরাধের জন্য লাইসেন্স বাতিলের পরিবর্তে বিধি দ্বারা নির্ধারিত জরিমানা আদায়পূর্বক সনদ নবায়ন এবং নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে মালিকানা হস্তান্তর দেশে/বিদেশে শাখা অফিস খোলার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে ট্র্যাভেল এজেন্সি হতে কাঙ্ক্ষিত সেবাপ্রাপ্তি সহজ হবে। অধিকন্তু সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।”

বিলটি জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো তোলার সময় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির কয়েকজন সংসদ সদস্য বিমানের টিকিট নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন। জবাবে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, সরকার অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, “ট্র্যাভেল এজেন্সির কাজ হচ্ছে এজেন্টের। সাপ্লায়ার বিমান। বিমানের এজেন্সির জন্য আইন কেন করা হল? এর প্রয়োজন ছিল না।

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, “ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোর স্বার্থ রক্ষার জন্য বিলটি আনা হয়েছে। এ বিষয়টি আরও যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন। গ্রাহকদের স্বার্থ যাতে রক্ষা করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। ঢাকা বিমানবন্দরে মশার উৎপাতে বসা যায় না। ব্যাট নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ফুটুস ফুটুস করে মশা মারে। ভিআইপ লাউঞ্জগুলোতে বসা যায় না। কে বসবে কে বসবে না কোনো ঠিক নেই। এগুলো মন্ত্রণালয়কে ঠিক করতে হবে।“

বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, “সনদ বাতিল না করে শুধু অর্থদণ্ড দেওয়ার জন্য বিলটি আনা হয়েছে। ৫৩ থেকে ১০০টি কোম্পানি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এজেন্সিগুলো নিজেরা ক্রেতা সেজে টিকিট বুক করে রাখে। এতে ক্ষতি হয় বিমানের। যে এজেন্সিগুলোর কথা বলা হচ্ছে। সেগুলোর নিয়ন্ত্রক মন্ত্রণালয়। অদক্ষ ব্যবস্থপনার জন্য বিমান লসে। আড়াই হাজার কোটি টাকা দেনা পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের কাছে। উড়োজাহাজ কেনা, ইজারা দেয়া, ফুড ক্যাটারিংয়ে অনিয়ম হয়। এজেন্সি, জিডিএস সিন্ডিকেট বহাল আছে।”

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “বিলটা আনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে দ্বিমত নেই। বিমানের ইতিহাস সুখকর নয়। বেশিরভাগ সময় এটি লস করেছে। লাভ করেছে কম সময়ে। বিমানের ম্যানেজমেন্টের দুর্বলার কারণে লাভ করা মুশকিল। যারা এজেন্ট তারা টিকিট বিক্রি টাকা দেয় না। এজেন্টরা কারসাজি করে। টিকেট পাওয়া যায় না। কিন্তু সিট ফাঁকা থাকে। এর জন্য কী করবেন?”

এসব সমালোচনার জবাবে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, মন্ত্রণালয় অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

“আমরা অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি। জিডিএস সিস্টেম, টিকিট না পাওয়া এগুলো ছিল। আমরা তদন্ত করেছি। কিছু স্টেপ নিয়েছি, যাতে কোনো সমস্যা না হয়। টিকেটিং সিস্টেমে যাতে সমস্যা না হয়। ট্র্যাভেল এজেন্সি, এয়ারলাইন্সগুলোর অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত করোনাভাইরাসে। অনেক সঙ্কটের মধ্যে চলছে। এখন কেউ বলতে পারবে না টিকেট নেই। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।”

এজেন্সি ও ভোক্তা- উভয়ের স্বার্থে এ বিল আনা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি বলছি না দুর্নীতি নেই। সীমিত আকারে আছে। যে জড়িত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নেওয়া হচ্ছে।”

আরো সংবাদ