স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

দেশে করোনার টিকা নিয়ে কেমন আছেন তারা

দেশে করোনা ভাইরাসের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ২৬ জনকে দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। তার পরদিন এই হাসপাতালের সঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে টিকা দেওয়া হয় ৫৪১ জনকে।

দুদিনে দেশের পাঁচটি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড-বয়, হাসপাতালগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষী, টেকনিশিয়ান, টেকনোলজিস্টসহ ৫৬৭ জন টিকা নিয়েছেন। এই ৫৬৭ জনের মধ্যে আরও আছেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নান, তথ্য সচিব খাজা মিয়া, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

দেশে প্রথম টিকা নেওয়া এই ৫৬৭ জনের মধ্যে কারা কেমন আছেন জানতে কথা বলে তাদের কয়েকজনের সঙ্গে। আর স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, করোনার টিকা প্রয়োগের পর গুরুতর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও এক থেকে দুই শতাংশ টিকা গ্রহীতার মাঝে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেছে।

‘টিকা তো দেওয়া হয়েছে ৫৬৭ জনকে, তার মধ্যে এক থেকে দুই শতাংশ লোকের এরকম সমস্যা হয়েছে। এটা তো এতো বড় কিছু নয়, সবাই এখন সুস্থ আছেন’ — বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.  নাসিমা সুলতানা।

গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম দিনে করোনা ভাইরাসের টিকা যে পাঁচজন নিয়েছেন তিনি তাদের একজন। অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে টিকা নেওয়া ৫ জনের মধ্যে আমিও একজন। আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। আমি প্রথম দিনেই বলেছি এবং শুরু থেকেই বলে আসছি, টিকা দিলে স্বাভাবিক যে প্রতিক্রিয়া যেমন—জায়গাটা ফুলে যায়, লাল হয়, সামান্য জ্বর হয়। এটা আসলে খুব স্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এমনটা টিকা নেওয়ার পর কয়েকজনের হয়েছে। তারা আমাদেরকে ফোন করেছে যে জ্বর এসেছে এবং একদিন পরই আবার জ্বর নেমে গেছে এই তথ্যও আমরা পেয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন যেদিন টিকা দেওয়া হয়েছে, সেদিন জ্বর এসে পরের দিন ছিল। তারপর দিনই আবার সুস্থ হয়ে গেছেন। এছাড়াও আরও কয়েকজন আমাদের জানিয়েছে যে, তাদের একবার বমি হয়েছে, অল্প অল্প মাথা ঘুরেছে। সবগুলোই আসলে খুবই সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।’

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় দেশে করোনা ভ্যাকসিনের কার্যক্রম। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে এই হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ১০০ জন। এদের মধ্যে চিকিৎসক ৫০ জন, নার্স ১৩ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আছেন ৩৭ জন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনার টিকা নিয়েছেন ১২০ জন। তাদের মধ্যে ৫৪ জন চিকিৎসক, ৭ জন নার্স এবং ৫৮ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনার টিকা নিয়েছেন।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ৬৫ জন। এরমধ্যে চিকিৎসক ১২ জন, নার্স ৫ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আছেন ৪৮ জন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে করোনার টিকা নিয়েছেন ১৯৮ জন। এদের মধ্যে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নান, তথ্য সচিব খাজা মিয়া এবং বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া আছেন। বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য  প্রথম টিকা নেন। এছাড়া টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক ১৪২ জন, নার্স ৪ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ৪৮ জন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘সব কাজ করছি, আমি তো অপারেশনও করলাম। টিকা দেওয়ার পর ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে ছিলাম, কয়েকটা মিটিং ছিল সেগুলোতে অংশ নেই, সবকিছু শেষ করে বাসায় যাই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কারও কারও টিকা দেবার জায়গাতে ব্যথা হয়েছে—যেটা খুবই স্বাভাবিক, নেগলিজেবল এটা। কিন্তু কারও জ্বর বা অন্য কিছুর কথা কেউ বলেননি। সব ঠিক আছে।’

‘যে কোনও টিকা নিলেই সেখানে ব্যথা হয়, একটু গলা ব্যথা-এগুলো খুবই সাধারণ, চলেও গেছে’ বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু।

তিনি বলেন, ‘খুবই মাইনর এগুলো। মেনশন করার মতো বা চিকিৎসা নেওয়ার মতো কিছু হয়নি, ওষুধও খেতে হয়নি। তবে এটুকু হবেই—এ নিয়ে অস্বস্তির কিছু নেই বা আতঙ্কের কিছু নেই। শিশুদের টিকা দিলেও জ্বর হয়, ব্যথা হয়, ফুলে যায়-এগুলো দেখে আমরা অভ্যস্ত, তাই এ টিকা নিয়ও ভয়ের কিছু নেই।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডার্মাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইফুল ভুঁইয়া বলেন, ‘প্রথম দিনে কোনও সমস্যা হয়নি, তবে দ্বিতীয় দিন গা ব্যথার মতো ছিল, তারপর সবকিছু ঠিক আছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে যাচ্ছি-চেম্বার করছি, কোনও সমস্যা হয়নি।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৩৮ জন চিকিৎসক ও ৩ জন নার্সসহ মোট ৫৮ জন টিকা নিয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ৪৯ জন এবং নারী ৯ জন। এদিন এই হাসপাতালে সবার আগে টিকা গ্রহণ করেন অ্যানেস্থেশিয়া অ্যান্ড আইসিইউ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার বণিক। তিনি বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে ভ্যাকসিন নিয়েছি। প্রথম প্রথম অল্প সময়ের জন্য মাথা ঝিমঝিম ছিল। কিন্তু সেটাও ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে ঠিক হয়ে যায়। তারপর থেকে একদম স্বাভাবিক আছি, সুস্থ আছি। কোনও সমস্যা নেই।’

মুগদা জেনারেল হাসপাতালে টিকা নেন শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. আবু সাঈদ শিমুল। তিনি বলেন, ‘টিকা নেওয়ার পর জ্বর এসেছিল রাতে, পরের দিন দুপুর পর্যন্ত টায়ার্ডনেস ছিল। এরপর থেকে সব ঠিকই ছিল।’

‘এ হাসপাতালে টিকা নেওয়াদের মধ্যে কয়েকজনের সামান্য অসুবিধা হয়েছে, বাকি সবাই ঠিক ছিলেন। আর এখন তো সবাই যার যার কাজ করছেন’—বলেন তিনি।

হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রেজাউল কবির চৌধুরী করোনার টিকা নিয়েছেন। তিনি বলেন,  ‘এ হাসপাতালে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কারও সিরিয়াস টাইপের অসুবিধা হয়নি, তবে জ্বর হয়েছিল কয়েকজনের । সেটাও ঠিক হয়ে গেছে। টিকা দেবার দিন থেকেই কাজ করছি।’

আরো সংবাদ