স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

করোনা জয়ের পথে বাংলাদেশ

দেশে করোনা সংক্রমণ এখন ডাবল ডিজিটে। সংক্রমণের হারও তিন শতাংশের নিচে। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে টিকাপ্রদান। পুরোদমে সচল জীবনযাত্রাও। এসব সূচক ইঙ্গিত দিচ্ছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের, তবে কী করোনা জয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের জুন-জুলাই মাসে দেশে সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল। ওই সময় প্রতি সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। এরপর বিভিন্ন সময় নতুন রোগীর সংখ্যা কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। তবে গত টানা ৯ সপ্তাহ ধরে নতুন রোগী কমছে। এর মধ্যে সর্বশেষ তিন সপ্তাহ ধরে প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজারের কম রোগী শনাক্ত হচ্ছে। সর্বশেষ সাত সপ্তাহ ধরে মৃত্যুও কমছে। রোগী শনাক্তের হারও টানা তিন সপ্তাহ ধরে ৫ শতাংশের নিচে। এর মধ্যে সর্বশেষ তিন দিন শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশা করা যায়। তবে সংক্রমণ যেন আর বাড়তে না পারে, সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের ঘোষণা আসে গত বছরের ৮ মার্চে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ৬ এপ্রিল দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ৫ শতাংশের ওপরে উঠে গিয়েছিল। মের শেষ দিক থেকে অগাস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত তা ২০ শতাংশের উপরেই থাকে। এর মধ্যে ১২ জুলাই তা ৩৩.০৪ শতাংশে পৌঁছায়, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে দৈনিক শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের নিচেই ছিল, মাঝে কেবল একদিন তা ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছিল।

এদিকে গত বছরের এপ্রিলের পর গত ১৪ জানুয়ারি প্রথমবারের মত দৈনিক নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত রোগীর হার ৫ শতাংশের নিচে নামে। সেদিন সংক্রমণের হার ছিল ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়ায় ২ দশমিক ৭৯ শতাংশে। এরপর গতকাল ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে আরও ২৯২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এতে পরীক্ষার বিপরীতে একদিনে সংক্রমণের হার কমে ২.৩৫ শতাংশে নেমে আসে।

সংক্রমণের হার এখন কম থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় জোর দিচ্ছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে, কিন্তু দেশের বড় একটি অংশকে টিকা দিতেও অনেক সময় লাগবে। তাই স্বাস্থ্যবিধিতে ছাড় দেওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, মাস্ক সবাইকে পরতে হবে, হাত নিয়মিত ধুতে হবে। নিয়ম না মানলে সংক্রমণ আবার বেড়ে যেতে পারে। আমরা যদি মাস্ক না পরি, সামাজিক আচার অনুষ্ঠান বাড়িয়ে দিই, বিয়েবাড়ি, যাত্রা-থিয়েটার ওয়াজ মাহফিল করে বেড়াই তাহলে আবার বেড়ে যেতে পারে। এজন্য লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী পরপর দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। এরপর বলা যাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে।পরিস্থিতি অনেকদিন ধরেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে এটা ধরে রাখতে হবে। একটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ডা. ফ্লোরা বলেন, একদিকে সংক্রমণের হার কমছে, অন্যদিকে দেশে টিকাদানও শুরু হয়েছে। এ সময় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমে যেতে পারে, কিন্তু তা হলে চলবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে আরও বেশি। এখানে কোনো ঢিলেমি করা যাবে না। আমরা যদি কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশন, স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানাতে পারি, তাহলে এটা আমরা আরও কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে পারব। ভ্যাকসিন দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানা গুরুত্বপূর্ণ।

আরো সংবাদ