স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

আরব বিশ্বে প্রথম হোপ প্রোব মিশন : মহিয়সী নারী সারা আল মারী’র সফলতা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দক্ষ নেতৃত্ব গুনে আরব বিশ্বে প্রথম দেশ যারা মঙ্গল গ্রহে মিশন পাঠালো। আমিরাতসহ এই নিয়ে বিশ্বের ৫টি দেশ। এই পর্যন্ত মঙ্গল গ্রহে মিশন পাঠিয়েছে। বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন একটি বার্তা তারা বিশ্ব বাসী কে দিলো। যে কারণে দেশটিকে এখন আর পেছন ফিরে তাকাতে হবেনা।

আরবিতে মহাকাশযানটির মূল অংশ বা প্রোবের নাম রাখা হয়েছে ‘আল আমাল’।

বিশ্বকে আজ অবাক করার মতো ”হোপ প্রোব” মিশনের নেতৃত্বে যিনি আছেন তিনি কিন্তু একজন নারী। শুধু কি নারী? না, তিনি একজন আরব নারী। যার নাম সারা বিনতে ইউসুফ আল মারী। তিনি এখন বিশ্বের জন্য উৎসাহের শক্তি।

১৯৮৭ সালে জন্ম নেওয়া ওই নারীর বয়স মাত্র ৩৪ বছর। তিনি একাধারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্নত বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্পেস এজেন্সির সভাপতি এবং ইউ.এ.ই. কাউন্সিল অব সাইনটিস্ট এমারত মার্স মিশনের ডেপুটি প্রেজেক্ট ম্যানেজার।

সারা পড়ালেখা করেছিন আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব শারজাহ’তে। ছোটকাল থেকে সারা মহাকাশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছিলো বলে আজ তিনি বিশ্ব নারী সমাজের জন্য উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। মহান আল্লাহ তা-আলা উনাকে দীর্ঘয়ু দান করেন। সফলতায় ভরে উঠুক তাঁর বাকী জীবন। আমিন।

আমিরাতের দাবি, তাঁদের এই মঙ্গল অভিযানের ফলে বিভিন্ন ঋতুতে লাল গ্রহের আবহাওয়া কেমন থাকে তা জানা যাবে। হোপ এ বিষয়ে পুরো তথ্য দেবে, যা আগে পাওয়া যায়নি।

‘হোপ প্রোব’ কী:

আরব দুনিয়ার প্রথম মহাকাশ অভিযান। তাই হোপ-এর উৎক্ষেপণের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বিশ্ব। জাপানের তানেগাশিমা স্পেস সেন্টার থেকে জাপানি রকেটে করে হোপ-এর নিখুঁত উৎক্ষেপণ হলো। প্রায় সাতমাস পরে আজ মঙ্গল পৌঁছার কথা রয়েছে। যা পৌঁছার পর কাজ শুরু করবে এবং মঙ্গলের পরিবেশ ও আবহাওয়া নিয়ে তথ্য পাঠাবে। তারপর দুই বছর ধরে মঙ্গলের চারপাশে ঘুরবে। মহাকাশযানের যন্ত্রপাতি মঙ্গলের উপরিভাগের আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পাঠাবে।

মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথের কাছে যাওয়ার সাথে ‘হোপ প্রোব’ সম্পর্কে আপনার জানা উচিত এমন পাঁচটি ফেক্ট:-প্রোবে কোনও অ্যাস্ট্রোনট নেই, এটি মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করবে না এবং এটি পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবে না।- প্রোবের মিশনটি মঙ্গল সম্পর্কিত তথ্য আবিষ্কার করবে যা এক মঙ্গল বছর বা দুটি পৃথিবী বছর পরেও বৈধ হতে পারে। – ডিজাইন এবং প্রোগ্রামিং পর্বের সময়, হোপ প্রোব দলটি সম্ভাব্য সমস্ত পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করেছে। তবে মহাকাশে সর্বদা প্রতিকূল ঘটনা হওয়ার অবকাশ থাকে।

মিশনটি সফল হলে, সংযুক্ত আরব আমিরাত মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানোর পঞ্চম দেশ হবে। যাইহোক, প্রোবের বৈজ্ঞানিক লক্ষ্যগুলি অতুলনীয় এবং পূর্ববর্তী মিশনগুলি দ্বারা এটি অর্জন করা যায়নি। – মঙ্গলটির নিরক্ষীয় অঞ্চলের ঠিক উপরে প্রোবের একটি অনন্য ট্র্যাজেক্টোরি থাকবে।

হোপ প্রোব আজ মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারী) ১৯ টা ৪২ মিনিটে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সময়ে, মঙ্গল গ্রহের চারপাশে তার কক্ষপথে পৌঁছনোর কাছাকাছি থাকবে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বে প্রথম আরব গ্রহ আবিষ্কার সম্পর্কে পাঠকদের জানা উচিত এমন পাঁচটি সত্য রয়েছে।

প্রথম : আমিরাত মঙ্গলবারের মিশনের কাঠামোর আওতায় পরিচালিত হোপ প্রোবের বোর্ডে অ্যাস্ট্রোনট নেই। তবে এটিতে প্রায় ১ হাজার গিগাবাইট তথ্য এবং বার্তার উপর প্রোগ্রামযুক্ত বৈজ্ঞানিক ডিভাইস রয়েছে এবং দুবাইয়ের আল খাওয়ানিজের মোহাম্মদ বিন রশিদ স্পেস সেন্টারে আর্থ কন্ট্রোল স্টেশনে প্রেরণ করেছে। প্রোবটি এমিরতি স্পেস সেক্টরে অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং উদ্ভাবনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন নতুন ক্ষেত্রের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির বৈচিত্র্য এবং দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। এটি যুব জাতীয় ক্যাডারদের সক্ষমতা তৈরিতেও সহায়তা করেছে যারা জাতীয় মহাকাশ বিভাগকে সাসটেইনেবল বৃদ্ধির নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। প্রোবটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়তে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশিষ্ট মর্যাদাকে শক্তিশালী করে, একটি সক্রিয় ও দক্ষ দেশ হিসাবে যা মানবতার অগ্রগতিতে অবদান রাখে।

দ্বিতীয় : হোপ প্রোবের বৈজ্ঞানিক মিশন প্রসারণযোগ্য, তাই বিজ্ঞানীরা লাল গ্রহ সম্পর্কে আবিষ্কৃত ঘটনার অধ্যয়ন অব্যাহত রাখতে পারেন। প্রোবটি দুটি মার্টিয়ান বছর বা ৬৭৮ দিনের জন্য পরিচালিত এবং প্রোগ্রাম করা হয়েছিল, 1,374 দিনের প্রয়োজন হলে এটি প্রসারিত হতে পারে।

তৃতীয় : পরিকল্পনা এবং প্রোগ্রামিং পর্বের সময়, হোপ প্রোব দলটি সম্ভাব্য সমস্ত পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করেছে। তবে, সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রতিকূল ঘটনার অবকাশের সম্ভাবনা থাকে। ২০১৩ সালে মন্ত্রিপরিচালনের পাশাপাশি প্রকল্পের পরবর্তী পর্যায়গুলির সময় এটি কেবল একটি ধারণা ছিল বলে প্রোবটি সমস্ত চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান করেছে। ২০২১০ সালের জুলাইয়ে প্রোবের সফল প্রবর্তন সত্ত্বেও, মঙ্গল গ্রহের আবিষ্কারের মিশনটি এখনও ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারে, কারণ মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে সফল যাত্রার হার ঐতিহাসিকভাবে ৫০ শতাংশ ছাড়ায়নি। মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশের আসল চ্যালেঞ্জটি পৃথিবী স্টেশন থেকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটার থেকে ১৮ হাজার কিমি / ঘণ্টায় প্রোবের গতি কমিয়ে আনা অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, এই ২৭ মিনিটকে “ব্লাইন্ড পিরিয়ড” হিসাবে ডাকা হবে, কারণ প্রোবকে মানুষের মিথস্ক্রিয়া ছাড়াই চ্যালেঞ্জগুলি নেভিগেট করতে হবে। যদিও প্রোবের দলটি এই সময়ের মধ্যে এটি সমস্ত সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য প্রোগ্রাম করেছে এবং অসংখ্য সিমুলেশন করেছে, মহাশূন্যে সবসময় প্রতিকূল ঘটনার অবকাশের সম্ভাবনা থাকে।

চতুর্থ : মঙ্গল গ্রহ মিশন সফল হলে সংযুক্ত আরব আমিরাত এই ঐতিহাসিক কৃতিত্ব অর্জনকারী পঞ্চম দেশ হবে। তবে, প্রোবের বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যগুলি অতুলনীয় এবং ইতিহাসের প্রথম হিসাবে বিবেচিত হবে। প্রোবের লক্ষ্য ছিল চারটি সিজনে মঙ্গল দ্বারা অভিজ্ঞ জলবায়ু পরিবর্তনের একটি সম্পূর্ণ চিত্র তৈরি করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এই গ্রহে পৌঁছানোর জন্য তিনটি দেশ প্রতিযোগিতা করায় ফেব্রুয়ারি মাস মঙ্গলবারের মাস।হোপ প্রোব যদি ২৭ ব্লাইন্ড মিনিট কাটিয়ে উঠতে সফল হয় এবং সময় বা সামান্য বিলম্বের সাথে গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছে যায় তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত এই প্রতিযোগিতাকে নেতৃত্ব দেবে, মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে পৌঁছানোর জন্য বিশ্বের পঞ্চম দেশ এবং প্রথম প্রচেষ্টায় মঙ্গলগ্রহে পৌঁছানোর জন্য তৃতীয় স্থান লাভ করবে।

পঞ্চম : হোপ প্রোব যদি সাফল্যের সাথে গ্রহের নিরক্ষীয় অঞ্চলের উপরে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছে যায় এবং তার মিশনের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করে, যা বৈজ্ঞানিক পর্ব, এই প্রক্রিয়াটিতে একটি মার্টিয়ান বছর সময় লাগবে। এই পর্যায়ে, প্রোব প্রতি ৫৫ ঘণ্টা পরে গ্রহটিকে ২ হাজার কিলোমিটার (কিমি) থেকে ৪৩ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত উপবৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করবে এবং প্রোব দলটি প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের মাধ্যমে তদন্তের সাথে যোগাযোগ করবে। দূরত্বের কারণে ১১ থেকে ২২ মিনিটের যোগাযোগের বিলম্ব হয়।

তরুণ দক্ষ জাতীয় ক্যাডারদের দ্বারা মিশন চলাকালীন স্টেশনটি পরিচালনা করা হয়েছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত মিশন (হোপ প্রোব) হ’ল একটি জাতীয় নীতিগত উদ্যোগ যা রাষ্ট্রপতি হিজ হাইনেস শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং হিজ হাইনেস শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, সহ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক, ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই এ ঘোষণা করেছিলেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার প্রকল্পের সমস্ত পর্যায় পরিচালনা ও বাস্তবায়নের জন্য মোহাম্মদ বিন রশিদ স্পেস সেন্টারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত মহাকাশ সংস্থা এর সাধারণ তদারকি করবে। গত বছরের ২০ জুলাই  এ প্রোব সফলভাবে উৎক্ষেপন করা হয়েছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিষ্ঠার ৫০ তম বার্ষিকীর সাথে মিল রেখে আজ  মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারী) এ প্রদক্ষিণ করে প্রোব গ্রহের জলবায়ু এবং বায়ুমণ্ডলের প্রথম বিস্তৃত গবেষণা করবে।

আরো সংবাদ