স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বিদেশে বাংলাদেশ চেনাচ্ছেন যে ৮ নারী দূত

স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের আট বছরের মাথায় প্রথম নারী কূটনীতিক পায় বাংলাদেশ। তবে বিদেশের মাটিতে নারী রাষ্ট্রদূত পেতে অপেক্ষা করতে হয় আরও ১৭ বছর। অর্থাৎ দীর্ঘ ২৫ বছর পর কোনো নারীকে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে পাঠানো হয়।

একজন নারীকে রাষ্ট্রদূত করার সিদ্ধান্তের পর ঢাকার আরও ছয় বছর লেগে যায় দ্বিতীয় কোনো নারীকে রাষ্ট্রদূতের ভূমিকায় আনতে। তবে গত কয়েক বছরে এই অবস্থার আমূল পরিবর্তন এনেছে ঢাকা। বর্তমানে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে আট নারী রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার ঢাকার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তারা প্রত্যেকেই পেশাদার কূটনীতিক।

এদের মধ্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন রাবাব ফাতিমা, যুক্তরাজ্যে রয়েছেন হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম, মরিশাসে হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ, ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ, পোল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা, দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম, জর্ডানে রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান ও ব্রুনাইতে রাষ্ট্রদূত নাহিদা রহমান সুমনা। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান ও যোগ্যতায় বড় সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার ছাড়াও অনেক নারী বিদেশি মিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে পুরুষ কূটনীতিকের পাশাপাশি নারী কূটনীতিকের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে যেসব নারী বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রত্যেকেই যোগ্যতা দিয়েই রাষ্ট্রদূত কিংবা হাইকমিশনারের পদে আসীন হয়েছেন।

বিদেশি মিশনে নারী কূটনীতিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন মরিশাসে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা রেজিনা আহমেদ। তিনি বলেন, ‘নারী কূটনীতিকদের সংখ্যা বাড়ছে, এটা আশাব্যঞ্জক। বর্তমানে আমিসহ আটজন নারী রাষ্ট্রদূত রয়েছি। রাষ্ট্রদূতের বাইরে বিভিন্ন মিশনে বড় বড় পদে নারী কূটনীতিকও আছেন। মন্ত্রণালয়ে গেলেতো দেখা যায়, বিভিন্ন পদে নারী কূটনীতিকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে বলব, এখানে আসতে আমাকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে; শুধু যে বাইরের পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে তা নয়, পরিবার-সন্তান সবকিছু ঠিক রাখতে হয়েছে।’

তিনি বলেন,‘আমাদের দেশে নারীদের রাষ্ট্রদূত করা হচ্ছে, অনেক দেশ এখনও এটা করতে পারেনি। সামনে আরও নারী কূটনীতিক বড় বড় পদে যাবে বলে আমি আশাবাদী।’

বাংলাদেশে ১৯৭৯ সালে পররাষ্ট্র সার্ভিস ক্যাডার থেকে প্রথম নারী কূটনীতিক হিসেবে যোগ দেন নাসিম ফেরদৌস। ২৩ বছর পর তাকে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত করা হয়। রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি দেশের দ্বিতীয় নারী। এর আগে ১৯৯৬ সালে প্রথম রাষ্ট্রদূত করা হয় মাহমুদা হক চৌধুরীকে। তিনি দুই বছর রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর নাসিম ফেরদৌস, নাসিমা হায়দার, সেলিনা মোহসিন, মাজেদা রফিকুন্নেসাসহ আরও অনেক নারী রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার হয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

বিদেশি মিশনগুলোয় শীর্ষ পদে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান সন্তোষজনক কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে নাসিমা ফেরদৌস বলেন, ‘নেতৃত্বের স্থানে নারীকে ৫০ শতাংশ দিতে হবে। সেটা ব্যাংকের চাকরি হোক আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণলায় হোক। রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে নারীদের জন্য অন্তত ৪০ শতাংশ হওয়া উচিত।’

সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যথেষ্ট ততদিন হবে না যতদিন আমাদের মানসিক চিন্তা ধারার বিকাশ হবে না। নারীরা সমঅধিকার চায়, একেবারে সমতল ভূমি চায় সেটা কিন্তু বলছে না। তবে তাদের প্রাপ্যটুকুতো দিতে হবে।’

নারী কূটনীতিকদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন সমতা, উনি এটার ওপর খুব জোর দিয়েছেন। সেজন্য আমরা অনেক নারী রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছি এবং আগামীতে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নারীদের সংখ্যা অনেক কম ছিল; এখন এর পরিমাণ অনেক বেড়েছে। আগামীতে কূটনীতিতে নারীদের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে। আমাদের সবচেয়ে বড় কূটনীতিক একজন নারী, জাতিসংঘে আছেন; লন্ডনের ক্যাপিটালে নারী। তাদের মেরিটের কারণে সেখানে যেতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, তারা যোগ্য, যোগ্যতার কারণেই ভালো জায়গায় অবস্থান করছেন। অনেক দেশের থেকে আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি। এমনকি জাপান থেকেও।

আরো সংবাদ