স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হতে আরও সময় লাগবে

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ স্থগিত। এরপর কর্মী নিয়োগ চালু করতে দুই দেশের মধ্যে গড়ে প্রতিমাসেই বৈঠক হচ্ছে। এ বিষয়ে একাধিক মন্ত্রী পর্যায়ের সফর এবং বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় স্থগিত হওয়া শ্রম বাজার এখনো চালু হয়নি।

কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশন জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে এখনো কাজ করছে। স্থগিত হওয়া শ্রম বাজার চালু করতে আরও সময় লাগবে। কিন্তু আর কত সময় লাগতে পারে সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে পারেনি। হাই কমিশনের উপ-হাই কমিশনার জানান, এই বিষয়ে আরও সময় প্রয়োজন।

হাই কমিশনার মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা কাজ করছি।

শ্রমবাজার চালু হলে বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সবাইকে জানানো হবে উল্লেখ করে হাই কমিশনার সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, খেয়াল রাখতে হবে, যাতে কেউ প্রতারণার শিকার না হয়।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে (জি টু জি পদ্ধতি) কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের ১০ প্রতিষ্ঠান (সিন্ডিকেট) দুর্নীতি করায় গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। গত আড়াই বছরে শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে কমপক্ষে পাঁচবার ইতিবাচক ঘোষণা আসলেও ওই সিন্ডিকেটের জন্যই তা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেছে।

এদিকে ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ঘটনাও চোখে পড়েনি। উল্টো ওইসব প্রতিষ্ঠানকে জনশক্তি রফতানিতে আরও সুযোগ দিতে চায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ওই ১০ প্রতিষ্ঠান হলো- ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, সানজারি ইন্টারন্যাশনাল, আল ইসলাম ওভারসিজ, ক্যারিয়ার ওভারসিজ, রাব্বী ইন্টারন্যাশনাল, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম ও এইচএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স।

সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির দুই দিনব্যাপী বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেও সিন্ডিকেট সংক্রান্ত বিষয়ে দুই দেশ একমত হতে না পারায় শেষ পর্যন্ত আশার আলো আবারও নিভে যায়।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, কয়েকটি ইস্যুতে আমরা একমত হতে পারিনি। উভয় দেশে নিজেদের মধ্যে এই বিষয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। শিগগিরই বিষয়টির সুরাহা হবে।

সূত্রগুলো বলছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দুই দেশের সরকারের মধ্যেই ব্যাপক শক্তিশালী। মূলত এই সিন্ডিকেটের কারণেই শ্রমবাজার চালু হওয়ার শেষ মুহূর্তে গিয়েও আটকে যাচ্ছে। মালয়েশিয়া নির্দিষ্ট সংখ্যক এজেন্সির মাধ্যমে শ্রম বাজার চালু করতে চায়। বাংলাদেশও এতে রাজি আছে। কিন্তু এজেন্সির সংখ্যা নিয়ে দুইদেশ একমত হতে পারছে না।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মীদের প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে। স্থগিত হওয়া শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে এখনও আলোচনা চলছে। যা এখনও চূড়ান্ত সমাঝোতা হয়নি, মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে।

জানা গেছে, দীর্ঘ ৭ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সালে সরকারিভাবে (জি টু জি) বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ চালু হয়। তখন বাংলাদেশের ১০ প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে দুই দেশের সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের একচেটিয়া সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে খরচ হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার টাকা। অথচ ওই ১০ সিন্ডিকেট প্রত্যেকের কাছ থেকে কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা করে নেয়। এতে কমবেশি ২ লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠাতে ওই সিন্ডিকেট আনুমানিক সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ওই ১০ সিন্ডিকেটের দুর্নীতির কারণে শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এখনও বাংলাদেশিদের জন্য স্থগিত আছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের রেমিটেন্সে।

আরো সংবাদ