স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

রমজানের চাঁদ দেখে খুশি হতেন মহানবী (সা.)

প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) রমজানের জন্য অপেক্ষা করতেন। রমজানের সৌভাগ্যপ্রাপ্তির জন্য দোয়া করতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রজব মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাজান’ বলে দোয়া করতেন।

অর্থ: হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (বায়হাকি ফি শুয়াবিল ইমান, হাদিস : ৩৫৩৪, তাবরানি ফিল আওসাত, হাদিস : ৩৯৩৯, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৪৬)

রমজানের চাঁদের জন্য অপেক্ষা করতেন

শাবান মাস শুরু হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের জন্য আরও ব্যাকুল হয়ে উঠতেন। তিনি শাবান মাসের দিন গণনা করতেন, চাঁদের হিসেব রাখতেন। রমজানের চাঁদের জন্য অপেক্ষা করতেন।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসুল (সা.) শাবান মাসের চাঁদের যেভাবে হিসেব রাখতেন, অন্যকোনো মাসের হিসেব সেভাবে রাখতেন না। পরে চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)

আল্লাহর রাসুল (সা.) তার উম্মতকেও নির্দেশ দিয়েছেন, শাবান মাসের চাঁদের হিসেব রাখতে। যেনো রমজানের রোজা নির্ভুলভাবে রাখা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসেব রাখো।’ (সুনানে বায়হাকি)

চাঁদ দেখা ফরজে কেফায়া

এসব হাদিসের আলোকে ইসলামি স্কলাররা শাবান মাসের ২৯ তারিখ সামগ্রিকভাবে চাঁদ দেখাকে ফরজে কেফায়া বলেন। আর রাসুল (সা.)-এর ব্যক্তিগত আমলের কারণে প্রত্যেক মুমিনের জন্য আকাশে চাঁদের অনুসন্ধান করা মুস্তাহাব মনে করেন।

হাদিসে আছে, আকাশে রমজানের চাঁদ দেখে রাসুল (সা.) খুশি হতেন ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন। রমজানের চাঁদকে অভিনন্দন জানাতেন। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি রমজানের চাঁদকে সুপথ ও কল্যাণের বার্তাবহ বলে সম্বোধন করতেন। রমজানের কল্যাণ ও বরকত লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) চাঁদ দেখে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ, হিলালু রুশদিন ওয়া খাইরিন।

তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত

অর্থ: হে অল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। সুপথ ও কল্যাণের চাঁদ! আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। (রিয়াজুস সালিহিন, হাদিস : ১২২৮)

চাঁদ দেখে খুশি হতেন ও দোয়া পড়তেন

রাসুল (সা.)-এর সাহাবিরাও (রা.) রমজানের চাঁদ দেখে খুশি হতেন এবং দোয়া পড়তেন। হিশাম ইবনে হাসসান থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র হাসান ইবনে আলী (রা.) চাঁদ দেখে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মাজআল্হু শাহরা বারাকাতিন ওয়া নুর, ওয়া আজরিন ওয়া মুয়াফাতিন, আল্লহুম্মা ইন্নাকা কাসিমুন বাইনা ইবাদিম্মিন ইবাদিকা, ফিহি খাইরান ফা-আকসিম লানা ফিহি খাইরাম্মা-তাকসিমু লিইবাদিকাস সালিহিন।’ (দোয়া-উ বিদায়াতি শাহরিন জাদিদ, আল-বাওয়াবা : ০১ এপ্রিল, ২০২১)

অর্থ: হে আল্লাহ! এ মাসকে প্রাচুর্য ও জ্যোতিময় করুন, পুণ্য ও ক্ষমার মাধ্যম করুন। হে আল্লাহ! আপনি (এ মাসে) আপনার বান্দাদের মাঝে কল্যাণ বিতরণ করবেন, সুতরাং আপনার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য যা বণ্টন করবেন, তা আমাদেরও দান করুন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)

হাদিসের গ্রন্থসমূহে এমন অসংখ্য দোয়া পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে সাহাবি ও আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দারা রমজানের চাঁদকে স্বাগত জানাতেন। সুতরাং করণীয় হলো, রমজানের চাঁদ অনুসন্ধান করা, চাঁদকে কল্যাণ ও বরকত লাভের দোয়ার মাধ্যমে স্বাগত জানানো।

আরো সংবাদ