স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

টিকা নিলেও ভারত ভ্রমণ নয়: নাগরিকদের সতর্কবার্তা যুক্তরাষ্ট্রের !

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতে লাগামহীনভাবে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় দেশটিতে ভ্রমণের বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন(সিডিসি)।

সোমবার এক বার্তায় দেশবাসীকে সতর্ক করার পাশাপাশি সিডিসি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ভারতকে ‘লেভেল ফোর’ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যার অর্থ— দেশটিতে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ অতি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।

সোমবারের সতর্কবার্তায় সিডিসি কর্তপক্ষ বলেছে, ‘বর্তমানে ভারতে করোনা সংক্রমণের যে পরিস্থিতি, তাতে যারা টিকার দু’টি ডোজই নিয়েছেন, তারাও ঝুঁকিতে আছেন। দেশটিতে সম্প্রতি করোনার একটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে, যেটি অতি উচ্চমাত্রায় সংক্রামক ও প্রাণঘাতী।’

 ‘এই অবস্থায় সিডিসি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভারতে ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে। এমনকি যারা টিকার দু’টি ডোজই নিয়েছেন, তাদেরকেও ভারত ভ্রমণের পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।’

‘তবে তারপরও কোনো নাগরিকের যদি একান্ত প্রয়োজনে ভারতে যেতেই হয়, সেক্ষেত্রে সিডিসির পরামর্শ হচ্ছে— (ভারতে গেলে) অবশ্যই সবসময় মাস্ক পরে থাকবেন, অন্যদের কাছ থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখবেন, জনসমাগম এড়িয়ে চলবেন এবং ঘন ঘন হাত ধোবেন।’

পুরো শীতকাল প্রায় নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত মার্চ থেকে ফের করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে ভারতে এবং গতবছরের তুলনায় এবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি।

গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ভারতে করোনায় দৈনিক সংক্রমণ ২ লাখের কোটা ছাড়িয়ে যাচ্ছে; এরমধ্যে রোববার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন পৌনে তিন লাখের বেশি রোগী।

সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতে দৈনিক মৃত্যুও বাড়ছে লাগামহীনভাবে। রোববার (১৮ এপ্রিল) দেশটিতে মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ৫০১ জন। তার আগের দিন শনিবার (১৮ এপ্রিল) দেশটিতে ১ হাজার ৩৪১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সেটিই ছিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে একদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা।

কয়েকমাস ধরে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুতে শীর্ষে আছে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্র। দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণ পৌঁছেছে প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি। সোমবার মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছে, সেখানে প্রতি তিন মিনিটে একজনের মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। সংক্রমণে রাশ টানতে ইতোমধ্যে রাজ্যে দুই সপ্তাহের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার।

এ রোগে সংক্রমণ ও মৃত্যুতে বর্তমানে মহারাষ্ট্রের পরই আছে দিল্লি। দিল্লির স্বাস্থ্যবিভাগ জানিয়েছে, রাজ্য শাসিত এই অঞ্চলটিতে করোনা পরীক্ষা করাতে আসা প্রতি তিনজনে একজন ‘পজিটিভ’ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার সপ্তাহজুড়ে লকডাউন জারি করেছে দিল্লির রাজ্য সরকার।

অনেকটা আকস্মিকভাবে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহারে উল্লম্ফনে সংকট দেখা দিয়েছে ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থায়। দেশটির বেশিরভাগ রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে শয্যা, অক্সিজেন এবং করোনা চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধের চরম সংকট চলছে। কিছু রাজ্যে ফুরিয়ে গেছে করোনার টিকার মজুতও।

বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থ হয়ে ওঠা সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট করোনা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, এ রোগে দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে শীর্ষে আছে ভারত।

 ভারতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় কেরালায়, ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি। তারপর প্রায় বছরজুড়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটতে থাকলেও গত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল সেখানে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারির দিকে ভারতে করোনায় দৈনিক সংক্রমণ গড়ে ১৫ হাজারেরও কম ছিল।

সূত্র: এনডিটিভি

আরো সংবাদ