স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

অভিবাসীদের জন্য সুপার অ্যাপ তৈরি করে ফোর্বসের তালিকায় সাজ্জাদ

‘ফোর্বসের তালিকায় বাংলাদেশি নয় তরুণ’ এই শিরোনামে অসংখ্য সংবাদ এসেছে পত্রিকার পাতায়। ৯ জনের সঙ্গে নেই আরেকজন বাংলাদেশির নাম; কারণটা হচ্ছে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন সিঙ্গাপুর অঞ্চল থেকে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ সাজ্জাদ হোসেন।

বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস প্রকাশিত এশিয়ার ‘৩০ অনূর্ধ্ব ৩০ (থার্টি আন্ডার থার্টি) ২০২১’ তে সামাজিক প্রভাবশ্রেণির তালিকায় নির্বাচিত হয়েছে ২৭ বছর বয়সী তরুণ সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের ইংরেজি ভাষা শেখানোর জন্য কাজ করছেন আট বছর ধরে। সাজ্জাদ হোসেন বর্তমানে সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে তড়িৎ প্রকৌশলে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। ‘সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এসডিআই) একাডেমি’ নামে সামাজিক উদ্যোগটির তিনি শুরু করেন ২০১৩ সালে। ইংরেজি ভাষা শেখানোর পদ্ধতি নিয়ে ২০১৪ সালে সাজ্জাদ হোসেন প্রকাশ করেন ‘ড. ইংলিশ’ নামে একটি বই।

এগারো বছর বয়সেই সাজ্জাদ পাড়ি জমিয়েছেন সিঙ্গাপুরে। বাবা ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার, সিঙ্গাপুরেই কর্মরত বহু বছর ধরে। অবশ্য শৈশব কেটেছে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন মতিঝিল মডেল স্কুলে।

প্রবাসে সাজ্জাদ সবচেয়ে বেশি মিস করেন ক্রিকেট খেলা। স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজার পরই সাজ্জাদের গন্তব্য ছিল খেলার মাঠ। সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর সেখানে কোনো সঙ্গী পাননি ক্রিকেট খেলার জন্য। সিঙ্গাপুরে সাজ্জাদ ভর্তি হলেন পঞ্চম শ্রেণিতে। ভর্তি হওয়ার পর সব বিষয়ে ভালো ফলাফল এলেও ইংরেজিতে ফলাফল ভালো হয়নি। তারপর চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হলো তাকে।

সেখান থেকেই তার উপলব্ধি হয়—ইংরেজির জন্য আমার দু’বছর হারাতে হয়েছে। অনেক বাংলাদেশী প্রবাসীদেরই এটা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আর সেখান থেকেই বাংলাদেশের প্রবাসীদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে সাজ্জাদ এবং তাদের সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করেন এবং সমাধান খুঁজে বের করার চিন্তা করেন। তিনি ভাবলেন, শ্রমিকদের একটা গাইডলাইনের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। সাজ্জাদের শুরুটা হয় ৫-৬ জনকে নিয়ে। প্রথমে একটা পার্কের মধ্যে বসেই সকলকে শেখানোর চেষ্টার পাশাপাশি সাজ্জাদ বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে বইপত্র এনে পড়াশোনা করে এই বিষয়ে। কিভাবে সিঙ্গাপুরের একটা ছোট্ট শিশু সারাক্ষণ ইংরেজিতে কথা বলতে পারে—এই বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করে। দীর্ঘ আট মাস গবেষণা করার পর সাজ্জাদ নিজেকে প্রস্তুত মনে করে এবং তাদেরকে জানায়, আমি একটা হল রুম ভাড়া নিচ্ছি এবং আপনাদের পরিচিত সকলকে নিয়ে আসেন আমি সবাইকে ইংরেজি শেখানোর চেষ্টা করব।

শুরুটা এভাবেই সাজ্জাদের। প্রথম দিনই ১৩৪ জন উপস্থিত হয় সাজ্জাদের ক্লাসে। করোনার পূর্ব-পর্যন্ত সাড়ে আট হাজারের বেশি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সাজ্জাদ এবং করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে অনলাইনে একটা অ্যাপের মাধ্যমে সেবা দেওয়া শুরু করেন। ১০ হাজার শ্রমিক সেবাটি গ্রহণ করেন এবং ঘরে বসেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা।

স্বীকৃতির জন্য কখনোই কাজ করা হয় না তবে স্বীকৃতির মাধ্যমে সকলে আমাদের কাজ সম্পর্কে জানতে পারছে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির বিষয় বলে জানান সাজ্জাদ হোসেন।

সাজ্জাদ জানান, সিঙ্গাপুরের বাইরে যেসব দেশে (যেমন কাতার, মালেশিয়া, দুবাই, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত।) বাংলাদেশিরা কর্মরত রয়েছেন সেখানেও এই সেবা ছড়িয়ে দিতে চাই। অভিবাসীদের জন্য আমরা সুপার অ্যাপ তৈরির প্রচেষ্টায় রয়েছি। খুব শিগগিরই এর সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

আরো সংবাদ