স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

সাঈদা মুনা সীতাকুণ্ডে

নাড়ির টানে পিত্রালয় চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের জাফরনগর গ্রামে এসেছেন ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় সৈয়দপুরে পা রাখলে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সীতাকুণ্ডের নবনিযুক্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদুল ইসলাম, সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচএম তাজুল ইসলাম নিজামীসহ স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সাঈদা মুনা তাসনিমের গ্রামে আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো সীতাকুণ্ডে। এরপর একে একে সাঈদা মুনা তাসনিমের দেখা পেতে তার বাড়িতে ভিড় জমান সাধারণ গ্রামবাসী, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা, সমাজসেবক, রাজনীতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।

শুক্রবার সকাল থেকেই সীতাকুণ্ডবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন সীতাকুণ্ডের এ কৃতী সন্তান। দুপুরে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ এস এম আল মামুন।

তার আগমনে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাদেরই একজন সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী। তিনি বলেন, ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম আমাদের সীতাকুণ্ডের মেয়ে, আমাদের গর্ব। তিনি আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন বিশ্বদরবারে। সীতাকুণ্ডের এই সন্তান আজ বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমাদের জন্য এর চেয়ে গর্ব এবং আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদুল ইসলাম তার ফেসবুকে লিখেন, ‘আল জাজিরার প্রোগ্রামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বুক চিতিয়ে তেজোদীপ্ত কণ্ঠে উনার বক্তব্য যারা শুনেছেন তাদের কাছে উনাকে আর নতুন করে পরিচয় করে দেওয়ার কিছু নাই। তবে বুয়েটিয়ান জেনে একটা এক্সট্রা টান ছিল আমার। আর কর্মস্থল সীতাকুণ্ডে উনার বাড়ি এটা জানার পর টাইমলাইনে এই ছবিটা না রাখাটা যেন অন্যায় হয়ে যায়…।’

সাঈদা মুনা তাসনিম বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। পেশাগত জীবনে তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিভিন্ন পদে অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘ অণুবিভাগের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন সাঈদা তাসনিম। ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর তিনি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের নতুন হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান।

তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জাফরনগর গ্রামে হলেও জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরীজীবী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে প্রথমে যোগ দেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনে প্ল্যানিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। সেখান থেকে ১৯৯৩ সালে যোগ দেন পররাষ্ট্র ক্যাডারে। লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও নিউইয়র্ক জাতিসংঘ মিশনে কাজ করেছেন সাঈদা। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তিনি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পারিবারিক জীবনে তিন সন্তানের জননী সাঈদা মুনা তাসনিমের শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশে।

গ্রামের বাড়িতে এসে গণমাধ্যমে নিজের অনূভুতি ব্যক্ত করেন সাঈদা মুনা তাসনিম। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের প্রতি আমার আলাদা টান, ভালোবাসা। প্রতি বছর শীতে ও দুই ঈদে আমরা বাড়ি আসতাম। শহরের পাথরঘাটায় আমাদের একটা বাড়ি আছে, সেখানে যেতাম। গ্রামের পুকুর, সবুজ ঘাস, মাটির গন্ধ আমাকে খুব টানে।

‘সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে পায়ে হেঁটে ওঠা, সীতাকুণ্ড-বাড়বকুণ্ডের বিভিন্ন মঠ-মন্দিরে ঘুরে বেড়ানো, বাড়ি থেকে কয়েক মিনিট হেঁটে সাগর পাড়ে চলে যাওয়া আমি খুব খুব মিস করি।’- বলেন কৃতী এ হাইকমিশনার।

আরো সংবাদ