স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

নিউজিল্যান্ড, দ্য ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়ন


টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরেই বাজিমাত! বিশ্ব জয় করলো ক্রিকেটের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড দলটা। যতদিন এই বিশ্বে মানুষ থাকবে, যতবার ওই লাল বলের ক্রিকেট উত্তাপ ছড়াবে, এখন থেকে ঠিক ততোবারই উচ্চারিত হবে ব্লাক ক্যাপসদের এই কাব্য গাঁথা।

বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দল নিউজিল্যান্ড। তবুও নামের সাথে কোনও বিশ্ব জয়ের গল্প না থাকায় চিরকালই একটু কম উচ্চারিত হয় এই দলটির না। তবে এবার সত্যিই লেখা হয়ে গেল অধরা সেই বিশ্বজয়ের গল্পটা। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে এই মহাকাব্য রচনা করেছেন জেমিসন, উইলিয়ামসন ও রস টেইলররা।

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের অভিজ্ঞ দুই কান্ডারি উইলিয়ামসন ও টেইলর। ভারতের দেয়া ১৩৯ রানের লক্ষ্যটা সংখ্যার হিসেবে ছোট মনে হতেই পারে। তবে কন্ডিশন, ফাইনাল ম্যাচের চাপ- সবমিলিয়ে এই ছোট লক্ষ্যটাও একসময় কঠিন মনে হচ্ছিল। ৪৪ রানে টম ল্যাথাম ও ডেভিড কনওয়ে ফিরে যাওয়ার পর চেপে বসেছিল ভারতের বোলাররা। একের পর এক ডট বলে চাপও তৈরি হচ্ছিল কিউইদের ওপর।

তবে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপটা গঠিত যাদেরকে নিয়ে তাঁরাই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন। টেইলর তাঁর ইনিংসের প্রথম ১৬ বলে রানের খাতা খুলতে না পারলেও একবারও মনোযোগ হারাননি। ১০৭ টেস্ট ম্যাচের অভিজ্ঞতার পুরোটা নিংড়ে দিয়েছেন রোজবোলের বাইশ গজে। সাথে ছিলেন কিউই ক্রিকেট পুনরুত্থানের নায়ক কেন উইলিয়ামসন। অতি মূল্যবান এক ফিফটি হাঁকিয়ে নিশ্চিত করেছেন দলের জয়।

২০১৩ সালে টানা পাঁচ টেস্ট হেরে যখন মুখ থুবড়ে পড়েছিল নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট তখন কে জানতো, ঠিক ৮ বছরের মাথায় এই টেস্ট ক্রিকেটেই বিশ্বজয় করে আনবে উইলিয়ামসনরা। ব্রান্ডন ম্যাককলাম যেই সাহসের বীজ বোপন করে গিয়েছিলেন, সেটাকে অতি যত্নে লালন করেছিলেন উইলিয়ামসনের সঙ্গীরা।

যে কোনও আসরেই ফেভারিট হিসেবে যাত্রা শুরু হয় না ব্লাক ক্যাপসদের। তবুও তাঁরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যান। ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট কথাটাকে তাঁরা সবচেয়ে গভীরভাবে বিশ্বাস করেন। ম্যাককলামের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবে তা বোধহয় কেউ আশাই করেনি। সেই থেকে নতুন এক দল হয়ে উঠলো নিউজিল্যান্ড।

ম্যাককলামের বিদায়ের পর উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে যেন আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলো দলটি।
২০১৯ বিশ্বকাপে আবারও আন্ডারডগ হিসেবেই খেলতে গিয়েছিল দলটি। দুই বছর আগে লর্ডসের ফাইনালে একেবারে দুর্ভাগ্যের কাছেই হার মেনেছিল কিউইরা। দুইবার টাই হওয়া ম্যাচটায় ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করে ক্রিকেটের অবাক করা এক নিয়ম। তবে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট স্পিরিটের কাছেই মাথা নত করেছিল গোটা ক্রিকেটবিশ্ব, স্বীকার করেছিল উইলিয়ামসনরাই সেরা, একটা বিশ্বকাপ তাঁদেরই প্রাপ্য।

দুই বছর বাদে সাউদাম্পটন যেন দুই হাত ভরে
দিল সেই উইলিয়ামসনদের। টেইলর ও উইলিয়ামসনে ৯৬ রানের মহাকাব্যিক এক জুটিতে ৮ উইকেটের সহজ জয়েই বিশ্বসেরা হলো দলটি। রোমাঞ্চে ভরা টেস্ট ম্যাচের শেষটায় তাই ছিল শুধু এই দুই ব্যাটসম্যানের স্ট্রোকের ফুলঝুরি। ভারতের শক্তিশালী বোলিং লাইনকেও শেষ সময়টায় অসহায় করে তুলেছিলেন এই দুইজনে।

সবমিলিয়ে দুই বছর ধরে চলা আসরের ইতিটা এর চেয়ে সুন্দর বোধহয় হতে পারতো না। বৃষ্টির কারণে বেশ খানিকটা বাঁধা আসলেও ক্রিকেট তাঁর সবচেয়ে অভাগা সন্তানকে দিলো দু’হাত ভরে। গ্যালারিতে নিউজিল্যান্ড সমর্থকদের জামা খুলে উদযাপন, টিম সাউদিদের ড্রেসিং রুম থেকে ছুটে আসা কিংবা টেইলরের শেষ বাউন্ডারিটা যেন বারবার উচ্চারণ করে যাচ্ছিল- নিউজিল্যান্ড, দ্য ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়ন!

তবে ফাইনাল সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন কিন্তু মাত্র ৮ টেস্ট খেলতে নামা কাইল জেমিসনই। ব্যাট হাতে ২১ রানের সঙ্গে বল হাতে ৭ উইকেট নেন ২৬ বছর বয়সী এই দীর্ঘদেহী বোলার। 

সুতরাং, ওয়ানডে ক্রিকেটে নামটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যদিও বেশিবার কাপ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়াই।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারত। আর ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত ফরম্যাটে নামটা হবে এখন থেকে নিউজিল্যান্ড।

আরো সংবাদ