স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বেঁধে দেওয়া ১৫ দিনের সময় ২৫ দিন পার হওয়ার পরও উচ্ছেদ হয়নি কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা

অবৈধ মাছ বাজার ও বরফ কলের চুক্তি বাতিল করতে বন্দরকে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন কমিটির চিঠি দেশের আমদানি রপ্তানির প্রাণখ্যাত কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মাছ বাজার ও মেরিনার্স পার্কের নামে বালু মহালসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বেঁধে দেওয়া ১৫ দিনের সময় শেষ হয়ে ২৫ দিন পার হলো। কিন্তু সেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে কোন সাড়া নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। গত ২৬ আগস্টের এক চিঠিতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়ে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠি দেওয়া হয় চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও জেলা নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক, সিটি মেয়র ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে। জেলা প্রশাসনের দপ্তর ওই চিঠি গত ৯ সেপ্টেম্বর গ্রহণ করে। সে হিসেবে চিঠি প্রাপ্তির ১৫ দিন পার হয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর। গতকাল (৪ অক্টোবর) পর্যন্ত ২৫ দিন পার হলেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কোন কার্যক্রম পরিচালনা করেনি কোন সংস্থাই।এদিকে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর কর্ণফুলী নদীর অবৈধ মাছ বাজার ও বরফ কলের চুক্তি বাতিল করতে বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন কমিটি। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কর্ণফুলী নদীর চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মোহনায় জাতীয় মৎসজীবী সমবায় সমিতিকে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর চুক্তির মাধ্যমে সেই জায়গা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৫ বছরের ওই চুক্তির ফলে সে জায়গায় এখন অন্তত ১৮শ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ওই মাছ বাজারের কারণে কর্ণফুলী নদীর প্রবাহমান ধারা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে এবং পানির চলমান প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। মাছ বাজারের আশে পাশের ভেড়া মার্কেটসহ ১৮ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন নোটিশ জারি করে। কিন্তু বন্দরের সাথে মাছ বাজারের চুক্তি থাকায় ওই সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। বন্দর চেয়ারম্যানকে অনতিবলম্বে ওই চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানান চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন কমিটি। এর আগে গত ১৭ আগস্ট চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন কমিটির পক্ষ থেকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বরাবরে কর্ণফুলী নদী ও তীর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নদী রক্ষা কমিশন গত ২৬ আগস্ট ‘কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে ওঠা মাছবাজার ও মেরিনার্স পার্কের নামে বালুমহালসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আবেদন’ শীর্ষক একটি চিঠি দেয় কর্ণফুলী নদী রক্ষায় দায়িত্বরত সংশ্লিষ্টদের।চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, ‘নদী রক্ষা কমিশন চিঠিটি চারটি দপ্তরকে দিয়েছে। ১৫ দিন পার হয়ে গেলেও নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশ মানেনি কেউই। ফলে আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি’।প্রসঙ্গত, প্রথম ধাপে কর্ণফুলী নদীর তীরে ২০১৯ সালের ৪ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি টানা পাঁচ দিনের অভিযানে ২৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ ও প্রায় ১০ একর ভূমি উদ্ধার করেছিল জেলা প্রশাসন। বন্দর এলাকা থেকে শুরু করে বারিক বিল্ডিং মোড়-গোসাইলডাঙ্গা-সদরঘাট-মাঝির ঘাট-শাহ আমানত সেতু হয়ে মোহরা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলেমিটার নদীর তীরকে তিন ভাগ করে শুরু হয় অভিযান। প্রথম ধাপে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয় সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার অংশে।ওই বছর ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছিল জেলা প্রশাসন।

আরো সংবাদ