স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

আফগানিস্তানে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা

শুক্রবার আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কুন্দুজ প্রদেশের একটি শিয়া মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।আহত হয়েছেন অনেকে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।জুমার নামাজের পরপরই বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত কেউ এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। দেশটির জাতিসংঘ মিশন এক টুইট বার্তায় এটিকে আত্মঘাতী বোমা হামলা বলে উল্লেখ করেছে।আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটিতে এটিই সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা। খবর এএফপি, রয়টার্স, আলজাজিরা, ডন ও আনন্দবাজার পত্রিকার। আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কুন্দুজ প্রদেশের কুন্দুজের গোজার-ই-সৈয়দ আবাদ মসজিদে বোমা হামলার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, মসজিদটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।পোস্ট করা একাধিক ছবিতে দেখা যায়-কুন্দুজের একাংশে আকাশে কালো ধোঁয়া উড়ছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আতঙ্কিত শত শত মানুষ রাস্তা দিয়ে ছুটে পালাচ্ছেন। আমিনুল্লাহ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে তার ভাইকে ফোন করেন।কিন্তু তার ভাই ফোন ধরছিলেন না। এরপর তিনি মসজিদের কাছে গিয়ে দেখেন তার ভাই আহত হয়েছেন। তাকে তখনই এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। এক শিক্ষক জানান, তার বাড়ির কাছেই বিস্ফোরণটি হয়েছে।এতে তার অনেক প্রতিবেশী প্রাণ হারিয়েছেন। বিস্ফোরণের সময় সেখানে অন্তত ৩০০ মুসল্লি ছিলেন বলে ঘটনাস্থলে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন।তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপমন্ত্রী এবং তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, কুন্দুজের খানাবাদ বানদার এলাকার একটি শিয়া মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।এছাড়া আরও অনেকে আহত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন উদ্ধার কাজ করে যাচ্ছে। আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কারি সাঈদ খোস্তি জানান, মসজিদটিতে অধিকাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ নামাজ পড়তেন। হামলার পর প্রাথমিকভাবে ২৮ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছিল তালেবান। তবে দ্রুতই সে সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে কুন্দুজ প্রাদেশিক হাসপাতালেই ৩৫ জনের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন আহত আরও অনেকে। এছাড়া এমএসএফ হাসপাতালে ১৫ জনের মরদেহ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সেখানেও অনেক আহতকে ভর্তি করা হয়েছে। কুন্দুজের প্রাদেশিক হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ হাসপাতালে অর্ধশতাধিক আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখানে এ পর্যন্ত ৩৫টি লাশ এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জুমার নামাজের সময় তারা মসজিদে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান।স্থানীয় ব্যবসায়ী জালমাই আলোকজাই জানান, এ ঘটনার পর আহত ব্যক্তিদের রক্ত দেওয়ার জন্য তিনি দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান। একে ভয়াবহ দৃশ্য বলে বর্ণনা করে তিনি আরও বলেন, অ্যাম্বুলেন্সগুলো ঘটনাস্থল থেকে মানুষের মাথা সংগ্রহ করছিল।এ সময় মসজিদে অনেক মুসল্লির রক্তাক্ত লাশও পড়ে ছিল। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের এক কর্মী জানান, এ হামলার ঘটনায় ১৫ জনের লাশ তিনি দেখেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।তিনি বলেন, স্বজনদের খোঁজখবর নিতে শত শত মানুষ হাসপাতালের মূল ফটকে ভিড় করছেন এবং তারা কান্নাকাটি করছেন। তবে পুনরায় বিস্ফোরণের আশঙ্কায় তাদের সেখানে জড়ো হতে বাধা দিচ্ছে সশস্ত্র তালেবান বাহিনী। শুক্রবারের হামলার আগে কাবুলসহ গোটা আফগানিস্তানজুড়েই একাধিক ছোট-বড় হামলা হয়েছে। সেসব হামলার দায় স্বীকার করেছে সুন্নি জিহাদি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট।তালেবান আফগানিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সক্ষম কিনা তা নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো।সাম্প্রতিক এসব হামলা সেই সন্দেহকে আরও জোরদার করছে। যদিও তালেবানের দাবি, তারা ইসলামিক স্টেটের জিহাদিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেল! : মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অর্ধশতাধিক আফগান মুসল্লিকে প্রাণ দিতে হয়েছে। হামলায় অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে।হতাহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। প্রিয়জনের লাশ খুঁজতে হাসপাতালের দিকে ছুটতে দেখা গেছে অনেককে। অনেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হঠাৎ আমরা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পাই।তাকিয়ে দেখি চারদিক ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যেই মসজিদটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বিস্ফোরণের পর শত শত মুসল্লি জখম হন। অনেককে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

আরো সংবাদ