স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু ৫ থেকে ১১ বছর বয়সীদের

শিশুদের করোনা প্রতিরোধে ৫-১১ বছরের (১২ বছরের কম বয়সী) টিকা প্রয়োগ অবশেষে চট্টগ্রামেও শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর মিউনিসিপ্যাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী শিশুদের এ টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় অনেক উন্নত দেশের চাইতে বাংলাদেশ অগ্রগামী। বিশ্ব দরবারে প্রধানমন্ত্রীর এই ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। যথাসময়ে কোভিড ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনেরও সফলতা রয়েছে। আমরা অন্য অনেক এলাকার তুলনায় টিকাদানে এগিয়ে রয়েছি। তাই শিশুদের টিকা প্রয়োগেও আমরা সফল হবো। নির্দিষ্ট বয়সী কোনো শিশু যাতে টিকার বাইরে না থাকে, আমাদের কাউন্সিলররা সেটি দেখভাল করবেন, সহযোগিতা করবেন। মোটকথা কোনো শিশু টিকা প্রাপ্তি থেকে বাদ পড়বে না।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহর লাল হাজারীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাছিম ভূঁইয়া, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রিটন বড়ুয়া, অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য শেষে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র মো. ইব্রাহিম উদ্দিনকে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫-১১ বছরের শিশু শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনের দিন (গতকাল) সব মিলিয়ে ৩০০ শিক্ষার্থীকে ওই স্কুলে টিকা প্রয়োগ করা হয়। উদ্বোধন ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ (২৫ আগস্ট) থেকে সিটি কর্পোরেশন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পুরোদমে এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকাদান সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হলেও প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীদের এ টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে চসিকের তত্ত্বাবধানে। স্কুলে স্কুলে গিয়েই শিশুদের এ টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক।
এ তথ্য নিশ্চিত করে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. নাসিম ভূঁইয়া আজাদীকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে চারটি টিম বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে এ টিকা প্রয়োগ করবে। প্রতি টিমে দুজন করে টিকাদান কর্মী থাকবেন। সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে সবমিলিয়ে ১৬৪টি টিম টিকা প্রয়োগে কাজ করবে। শিশুদের প্রথম ডোজ টিকাদানে মন্ত্রণালয় থেকে ১২ দিনের একটি সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একই সাথে টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক, কিন্ডার গার্টেন ও মাদ্রাসাসহ সিটি কর্পোরেশন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সবমিলিয়ে প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থী এ টিকা পাবে। সুষ্ঠুভাবে এ টিকাদান সম্পন্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলেও জানান চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ৫-১১ বছরের শিশুদের ফাইজারের বিশেষ ধরনের টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। টিকা পেতে এই বয়সী শিশুদের জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করতে হচ্ছে। সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন না হলে টিকা নেয়া যাবে না। তাই যাদের এখনো জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন হয়নি, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। শিক্ষার্থীদের টিকাদানে করণীয় বিষয়ে সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও বেশ কয়দফা নির্দেশনা জারি করে। শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধনে শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। জন্ম নিবন্ধন দিয়ে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে গেলে টিকাদান কেন্দ্র সিলেক্ট করতে হয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্র হিসেবে থাকা যেকোনো একটি হাসপাতাল সিলেক্ট করলেই চলবে। এটি শুধু নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্নের জন্যই। শিশুদের স্কুলে স্কুলে গিয়েই এ টিকা দেয়া হবে। তাই কেন্দ্রের বিষয়টি নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না বলে জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

আরো সংবাদ