স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বুলেটের চেয়েও ভালো বিকল্প অথচ দূরত্ব ঘোচাতে গুরুত্ব নেই

ঢাকা-লাকসাম রেল কর্ডলাইন

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার। ৫৩ বছর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ঢাকা-লাকসাম রুটে কর্ডলাইন (ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন) নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ এই রুটে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে হাইস্পিড লাইন নির্মাণ সমীক্ষার ১১০ কোটি টাকা সম্প্রতি পানিতে গেছে। অপরিকল্পিত ও সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনাবিহীন প্রকল্প বাস্তবায়নে সাধারণ মানুষ কোন সুফল পাবে না। বিশেষজ্ঞ অভিমত হচ্ছে ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন বাস্তবায়নই হবে সাশ্রয়ী এবং এতে সুফলও মিলবে।

ঢাকা থেকে আখাউড়া হয়ে অস্বাভাবিক ঘুরপথের কারণটি ঐতিহাসিক। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতে রেলপথ স্থাপন করা হয়েছিল ব্রিটিশদের অর্থনৈতিক স্বার্থে। তাই আসাম-বেঙ্গল  রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার্স করা হয়েছিল চট্টগ্রামে। সিলেট ও আসামের অন্যান্য এলাকায় উৎপাদিত চা সহজে রেলওয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি করার স্বার্থ ছিল আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে। সেই লক্ষেই চট্টগ্রাম থেকে রেললাইনটি আখাউড়া হয়ে সিলেট ও আসামে নিয়ে ঠেকানো হয়েছে।

ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন প্রকল্প রেলওয়ের একটি মাইলফলক পরিকল্পনা। ইলেকট্রিক ট্র্যাকশান কর্ডলাইন বাস্তবায়নে বেশকয়েকবার প্রাথমিক সমীক্ষাও করা হয়। কোনো অদৃশ্য কারণে এ প্রকল্পের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না।

আলাদা রেলপথ মন্ত্রণালয় হওয়ার পর চারজন মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করলেও কর্ডলাইন বাস্তবায়ন হয়নি। এ পথে ঢাকা-লাকসাম প্রায় ৯০ কিলোমিটার নতুন কর্ডলাইন নির্মাণ হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ২৩০ কিলোমিটারে দাঁড়াবে। কর্ডলাইনে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ উভয় ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এটি বাস্তবায়ন হলে মিটারগেজে ৩ ঘণ্টা ও ব্রডগেজে মাত্র ২ ঘণ্টায় বিরামহীন ট্রেন সার্ভিস দেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে আন্তঃনগর ট্রেনে প্রায় সোয়া ৬ ঘণ্টা সময় লাগছে। লোকাল ট্রেনে আরও অনেক বেশি সময় লাগছে। নতুন ইঞ্জিন-কোচ আনা হলেও প্রকৃত গতির চেয়ে অর্ধেকেরও কম গতি নিয়ে ট্রেন চলছে।

সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৪২ কিলোমিটার। রেলপথের চেয়ে ৭৮ কিলোমিটার কম। রেল পরিবহন খরচ সাশ্রয়ী, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব হওয়া সত্ত্বেও দূরত্ব ও বেশি সময় লাগার কারণে ট্রাক, বাস এবং কাভারডভ্যানের সাথে প্রতিযোগিতায় পারছে না।

ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন যোগাযোগ উন্নয়নে বুলেট ট্রেন নয়, সবচেয়ে ভালো বিকল্প কর্ডলাইন। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনে রূপান্তর। এতে ব্যয় হবে হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। অল্প খরচে ও অল্প সময়ে কর্ডলাইন নির্মাণ সম্ভব। এ দুই প্রকল্প বাস্তবাায়িত হলে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে।

কর্ডলাইন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সাধারণ যাত্রীরাও সাশ্রয়ী ভাড়ায় সহজে ভ্রমণ করতে পারবেন। রেলের আয় বাড়ার সঙ্গে সেবাও বাড়বে। রেলে আমূল পরিবর্তন আনতে কর্ডলাইন, ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের কোনো বিকল্প নেই।

আরো সংবাদ