স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

এক চিঠিতেই কপাল পুড়লো ৫০ হাজার পাঠকল শ্রমিকের

বৃহস্পতিবার বস্ত্র ও পাটকল মন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিব স্বাক্ষর করে একটি চিঠি দিলেন পাটকলগুলোতে। আর সে চিঠি দীর্ঘশ্বাসের ভেলায় ভাসালো ৫০ হাজার পরিবারকে। এই চিঠি পুড়লো ৫০ হাজার শ্রমিকের কপাল। এই চিঠি কেড়ে নিল তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।

কারণ এই চিঠিতেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রামের ৯টিসহ দেশের ২৫টি পাটকল। এসব পাটকলে শুধু স্থায়ী শ্রমিকই রয়েছে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন৷ অস্থায়ী রয়েছে আরও ২৫ হাজার শ্রমিক। তবে গোল্ডেন হেন্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে আগামী দুই মাসের বেতন।

বস্ত্র ও পাটকল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব খুরশীদ আলম রেজভীর স্বাক্ষরিত এই চিঠি বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) ২৫টি পাটকলের শ্রমিকদের হাতে পৌঁছে।

এদিকে নিজেদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন পাটকল বন্ধের কথা শুনে চরম হতাশায় পড়েছে পাটকল শ্রমিকরা। বাংলাদেশ পাঠকল ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মাথার উপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছে। এখন আমরা কি করবো, কোথায় যাব জানিনা। তবে আমরা আমাদের পাওনা আদায় না করে পিছু হটবো না।’

চট্টগ্রামের আমিন জুট মিল থেকে সম্প্রতি অবসরে যাওয়া আনসার আলী বলেন, ‘পাটকল শ্রমিকদের একটা বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে সরকার। চাকুরী গেলে এতো মানুষ যাবে কোথায়, খাবে কি? তাদের পরিবারের কি হবে সেদিকে কেউই ভাবছে না। আমরা যেন আমাদের পাওনা থেকে যেন বঞ্চিত না হই।’

জানা গেছে, বন্ধ হওয়া পাটকলের মধ্যে চট্টগ্রামে সরকারী ৯টি পাটকল রয়েছে। যেখানে বর্তমানে ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। চট্টগ্রামে ৯টি পাটকল গুলো হচ্ছে, নগরের আতুড়ার ডিপোর আমিন জুট মিল, বড়কুমিরা এলাকার হাফিজ জুট মিল, সীতাকুণ্ডের গুল আহম্মদ জুটমিল, এমএম জুট মিল, আরআর জুট মিল, বাড়বকুন্ড এলাকায় গালফ্রা হাবিব জুট মিল, রাঙ্গুনিয়া এলাকায় কর্ণফুলী জুট মিল, ঢাকা বাগদাদ কার্পেট (জুট মিল) পাহাড়তলী, মেল ফিনিসিং জুট মিল নাসিরাবাদ। এসব কারখানায় কাজ করেন ১৫ হাজার শ্রমিক।

প্রসঙ্গত, দেশের পাটকলগুলোতে অব্যাহত লোকসানের মুখে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামের আমিন জুটমিলের শ্রমিক নেতা কামাল হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামেও শ্রমিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে ঢাকা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ে এ বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্টিত হচ্ছে। কিন্তু এরপরও বন্ধ ঘোষণা দিল সরকার।’

রোববার (২৮ জুন) এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী পাটকলগুলোতে লোকসান হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লোকসান নিয়ে পাটকল চালাতে পারি না। শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে এই খাতকে এগিয়ে নেওয়া চিন্তা করেছে সরকার।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বিজেএমসি’র ক্রমবর্ধমান লোকসানের কারণে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক প্রক্রিয়ায় অবসায়নের মাধ্যমে মিলগুলোকে বর্তমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযাযী আধুনিকায়ন করা হবে। পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়ার পর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করে উৎপাদনমুখী করা হবে। তখন এসব শ্রমিক সেখানে চাকরি করার সুযোগ পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের ক্ষতি না করে তাদের লাভবান করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

করোনার এই সময়য়ে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো- প্রশ্নে পাটমন্ত্রী বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত ছয় মাস আগের। এই সময়ে তো তাদের টাকার প্রয়োজন হবে।’

বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, পাটকলগুলোতে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী কর্মচারী রয়েছেন। অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছে আরও ২৫ হাজার।

এদিকে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত ৮ হাজার ৯৫৪ জন শ্রমিকের প্রাপ্য সকল বকেয়া, বর্তমানে কর্মরত ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিকের প্রাপ্য বকেয়া মজুরি, শ্রমিকদের পিএফ জমা, গ্রাচ্যুইটি এবং সেই সাথে গ্রাচ্যুইটির সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ হারে অবসায়ন সুবিধা একসাথে শতভাগ পরিশোধ করা হবে। এজন্য সরকারি বাজেট হতে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হবে।

শ্রমিক নেতারা জানান, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক হলো স্থায়ী শ্রমিককে মজুরি কমিশন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের বিরোধিতা করে সারা দেশের ২৬টি পাটকলের শ্রমিকদের আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যেই বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমিকদের অবসায়নের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে সব পাটকল শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আরো সংবাদ