স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

অক্সিজেন না দিয়েও ম্যাক্স হাসপাতালের ভুতুড়ে বিল ৮৩ হাজার টাকা (ভিডিওসহ)

চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে ৮৩ হাজার টাকা ভুতুড়ে বিল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ছয় দিন চিকিৎসা দিয়ে ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বিল করেছেন হাসপাতালটি।


জানা যায়, শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসাধীন ৭৫ বছরের বৃদ্ধ সাইফুদ্দৌলা খানকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার পরামর্শ ছিল ডাক্তারের। ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই রোগীর স্বজনরা জানতেন সেভাবেই চলছে চিকিৎসা। তিনদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর মারা যাওয়া ওই রোগীর বিলেও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার বিল যুক্ত করা হয়। কিন্তু পরে জানা যায় রোগীকে অক্সিজেন দিতে আদতে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহারই হয়নি।

শুধু হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার চার্জই নয় আরও বিভিন্ন জিনিসের ভুয়া খরচ দেখিয়ে ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বিল করে হাসপাতালটি। পরে দুই দফায় রোগীর স্বজনদের চ্যালেঞ্জের মুখে সেটি ৮৩ হাজার টাকা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজারে। দুই দফায় বাদ যাওয়া এই ৮৩ হাজারের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ৪১ হাজার ৮১৪ টাকা ডিসকাউন্ট দেখানো হলেও ভুক্তভোগীরা বলছেন কোন রকমের ছাড় নয় বরং বিভিন্ন ভুয়া খাতে এসব বিলের বোঝা চাপিয়েছিল ম্যাক্স হাসপাতাল। যাকে এক কথায় বানোয়াট বিল বলছেন সাইফুদ্দৌলা খানের স্বজনরা।

https://www.facebook.com/yasir.arafat.52090/videos/1957226617744649/


স্বজনরা জানিয়েছেন, সাইফুদ্দৌলা খান গত ২৯ জুন দুপুর সাড়ে তিনটায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হন। শনিবার (৪ জুন) সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটের সময় তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিলেও তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। তার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলেও ফলাফল পাওয়া যায়নি।

মৃত সাইফুদ্দৌলা খানের শ্যালক ইয়াসির আরাফাত বলেন, দুলাভাই সাইফুদ্দৌলা গত তিন দিন ধরে ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। উনাকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার পরামর্শ ছিল ডাক্তারের। হাসপাতাল থেকেও আমাদের বলা হয় উনাকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মৃত্যুর পর কেবিনে গিয়ে আমি তেমন কোন মেশিন না দেখায় তাদের জিজ্ঞেস করি। তখনও তারা আমাকে বলে যে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দেওয়া হয়েছে। পরে যখন আমি চ্যালেঞ্জ করি, তখন তারা জানায় মেশিন ব্যবহার করেনি। অথচ বিলে এই বাবদ চার্জ করা হয়েছে। পরে তারা এক দফায় বিল সংশোধন করে ১ লাখ ৫১ হাজার ৮১৪ টাকার সংশোধিত বিল দেয়।

হাতেনাতে এমন প্রতারণায় ধরা খেয়ে সংশোধন করা বিলেও অনেক অসঙ্গতি ছিল জানিয়ে ইয়াসির আরাফাত বলেন, একবার সংশোধন করার পর সংশোধিত বিলেও দেখি অনেক অসঙ্গতি। যেমন তারা বলেছিল প্রতিদিন পিপিই, মাস্ক, হেন্ডগ্লাবস সব ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রি দিবে কিন্তু একবারও তা দেয়নি। অথচ সেটার চার্জ বিলে ছিল। ডাক্তার কলের ভুয়া চার্জও ছিল। এসব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার পর আবারও তারা বিল সংশোধন করে। শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বিল আসে।
তিনি বলেন, ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বিল থেকে আমরা ধরে ধরে ৮৩ হাজার টাকার ভুতুড়ে বিল বের করেছি। পরে তারা আমাদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছে। কিন্তু আমার কথা হলো যে রোগীকে যে সেবা দেওয়ার দরকার ছিল তা না দিয়ে কী ধরনের চিকিৎসা তারা করছে? তার ওপর এই ধরনের ভুয়া খাত দেখিয়ে বিল করা হচ্ছে। এসবের প্রতিকার হওয়া দরকার। এরকম শুধু আমাদের নয়। সব রোগীকে ম্যাক্স হাসপাতাল ভুতুড়ে বিল দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এই বিষয়ে সার্ভিল্যান্স টিমের দ্বারস্থ হচ্ছেন জানিয়ে ইয়াসির আরাফাত বলেন, তারা যদিও বিল সংশোধন করে ক্ষমা চেয়েছে। তবু আমার মনে হয় বৃহত্তর স্বার্থে এর একটা প্রতিকার হওয়া উচিত। আমি এর মধ্যে সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। আমি সার্ভিল্যান্স টিমের আহবায়ককেও এই বিষয়ে অভিযোগ দেবো।


এ বিষয়ে ম্যাক্স হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক রঞ্জন প্রসাদ দাস বলেন, অক্সিজেনের বিল নিয়ে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। এ ছাড়া যেহেতু রোগী মারা গেছে তাই সব কিছু বিবেচনা করে হাসপাতালের বিল আরও অনেক কমানো হয়।


এর আগেও হাপাতালটির বিরুদ্ধে রোগী মৃত্যুসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়। সর্বশেষ ওই হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক চিকিৎসা না পাওয়া অভিযোগ করেন।


এর আগে ২০১৯ সালের ২৯ জুন রাতে ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সাংবাদিক রুবেল খানের মেয়ে রাইফা খান। মৃত্যুর পর থেকেই রাইফার পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বরত চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণেই অকাল মৃত্যু ঘটে রাইফার।

আরো সংবাদ