স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

চট্টগ্রাম সিটিতে পশুর হাট বসাতে প্রস্তুতি সম্পন্ন, মানতে হবে বিভিন্ন নির্দেশনা

বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালের ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরীতে ৭টি পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

এর মধ্যে সাগরিকা ও বিবিরহাট গরুর বাজার ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার স্থায়ী। বাকি চারটি কোরবানি উপলক্ষে ইজারা দেওয়া অস্থায়ী পশুর হাট।

সূত্র জানায়, এবার অস্থায়ী নূরনগর হাউজিং কর্ণফুলী পশুর হাট দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৩৭৭ টাকায়। এ ছাড়া পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের পাশে খালি মাঠের পশুর হাট ৪৫ লাখ টাকা, সল্টগোলা পশুর হাট ৪১ লাখ টাকা ও কমল মহাজন হাট ৯৬ লাখ টাকায় ইজারা হয়েছে। অন্যদিকে স্থায়ীভাবে সাগরিকা পশুর হাট ৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, বিবিরহাট ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার ৭৭ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে।

সাগরিকা, বিবিরহাট ও পোস্তারপাড়ের স্থায়ী পশুর হাটগুলোতে নিয়মিত বেচাকেনা চললেও রোববার (১৯ জুলাই) অস্থায়ী পশুরহাটের ইজারাপ্রাপ্তদের চসিকের অনুমতিপত্র ও স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনাবলি দেওয়ার কথা রয়েছে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জনস্বাস্থ্য-১ অধিশাখার কোরবানির পশুর হাটে ও পশু কোরবানিকালীন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ব্যাপারে ১৩ জুলাইয়ের একটি গাইড লাইন ফলো করছে। উপ সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই গাইড লাইনে হাট কমিটির জন্য ১৬টি, ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য ৬টি ও পশু কোরবানিকালীন ২টি নির্দেশনা রয়েছে।

হাট কমিটির নির্দেশনায় রয়েছে:

১. হাট বসানোর জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নির্বাচন করতে হবে। কোনো অবস্থায় বদ্ধ জায়গায় হাট বসানো যাবে না।

২. হাট ইজারাদার কর্তৃক হাট বসানোর আগে মহামারি প্রতিরোধ সামগ্রী যেমন- মাস্ক, সাবান, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে। পরিষ্কার পানি সরবরাহ ও হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল সাবান/ সাধারণ সাবানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিরাপদ বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. পশুর হাটের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও হাট কমিটির সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হাট কমিটির সবার ব্যক্তিগত সুরক্ষা জোরদার করা এবং মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. পশুর হাটের সঙ্গে জড়িত সব কর্মীকে স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা দিতে হবে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলি যেমন মাস্কের সঠিক ব্যবহার, হাঁচি কাশির শিষ্টাচার, শারীরিক দূরত্ব, হাতধোয়া, জীবাণুমুক্তকরণ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিসমূহ সার্বক্ষণিক মাইকে প্রচার করতে হবে।

৫. মাস্ক ছাড়া কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা হাটে প্রবেশ করতে পারবেন না। হাট কর্তৃপক্ষ চাইলে বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করতে পারেন বা এর মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারেন।

৬. প্রতিটি হাটে সিটি করপোরেশন কর্তৃক ডিজিটাল পর্দায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা্ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করতে হবে।

৭. পশুর হাটে প্রবেশপথ ও বাহির পথ নির্দিষ্ট করতে হবে।

৮. পর্যাপ্ত পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পশুর বর্জ্য দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। কোথাও জলাবদ্ধতা তৈরি করা যাবে না।

৯. প্রতিটি হাটে সিটি করপোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ এক বা একাধিক ভ্রাম্যমাণ স্বেচ্ছাসেবী মেডিক্যাল টিম গঠন করে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মেডিক্যাল টিমের কাছে শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য ডিজিটাল থার্মোমিটার রাখা যেতে পারে, যাতে প্রয়োজনে হাটে আসা সন্দেহজনক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করা যায়। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে আলাদা করে রাখার জন্য প্রতিটি হাটে একটি আইসোলেশন সেন্টার (আলাদা কক্ষ) রাখা যেতে পারে।

১০. একটি পশু থেকে আরেকটি পশু এমনভাবে রাখতে হবে যেন ক্রেতারা কমপক্ষে ৩ ফুট বা ২ হাত দূরত্ব বজায় রেখে পশু কিনতে পারেন।

১১. ভিড় এড়াতে মূল্য পরিশোধ ও হাসিল আদায় কাউন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

১২. মূল্য পরিশোধের সময় সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়ানোর সময় যেন কম হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। লাইনে ৩ ফুট বা ২ হাত দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে রেখা টেনে বা গোল চিহ্ন দিয়ে দিতে হবে।

১৩. সব পশু একত্রে হাটে না ঢুকিয়ে হাটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পশু আনতে হবে।

১৪. ১টি পশু কেনার জন্য ২ জনের বেশি  ক্রেতা হাটে প্রবেশ করবেন না।

১৫. অনলাইনে পশু কেনাবেচার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে।

১৬. স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সব কাজ নিশ্চিত করতে হবে।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য নির্দেশনা:

১. ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।

২. সর্দি কাশি জ্বর বা শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেউ হাটে ঢুকতে পারবেন না।

৩. শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা হাটে আসতে পারবেন না।

৪. পশুর হাটে ঢোকার আগে ও বের হওয়ার সময় তরল বা সাধারণ সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।

৫. মূল্য প্রদান, হাটে ঢোকা ও বের হওয়ার সময় কমপক্ষে ৩ ফুট বা ২ হাত দূরত্ব বজায় রেখে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়াতে হবে।

৬. হাট কমিটি, স্থানীয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সব নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে স্থায়ী ৩টির পাশাপাশি ৪টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চসিক।

আরো সংবাদ