স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

যে কারণে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগী ভর্তি হচ্ছে না

চট্টগ্রামে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী। তারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অথচ গত মাসেও রোগীতে ঠাসা ছিল বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো। ভর্তি হতে না পেরে হাসপাতালের প্রবেশপথেও বেশ কয়েকজন রোগী মারা গেছেন।

এ প্রেক্ষাপটে রোগীর চাপ কমাতে গড়ে উঠে বেশ কিছু আইসোলেশন সেন্টার। এখন চট্টগ্রামে নগর ও উপজেলা মিলিয়ে হাজারের বেশি করোনা রোগী ভর্তির সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৫০ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১১০ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে ৩০ ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে ৫০ জন একসঙ্গে ভর্তি হতে পারবেন।

এছাড়া সিটি করপোরেশনের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন সেন্টার, ১০০ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম, ৫০ শয্যার সিএমপি-বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতাল, আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল, বন্দর হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সবশেষ তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রামে ১২ হাজার ৬৬৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; এর মধ্যে ৮ হাজার ৮২৩ জন নগরের ও ৩ হাজার ৮৪৬ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন মোট ২২১ জন; এর মধ্যে ১৫৭ জন নগরের ও ৬৪ জন উপজেলার বাসিন্দা।

চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ১ হাজার ৪৯৮ জন করোনা রোগী। সে হিসেবে ১১ হাজার ১৭১ জন রোগী হাসপাতাল কিংবা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালে রোগী কমে যাওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা, দুশ্চিন্তা দূর হওয়ায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। বাসায় চিকিৎসা নিয়ে অনেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাদের দেখে নতুন রোগীরাও বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। একইসাথে বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স ও বাসায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনায় রেড ও হলুদ জোনে বিভক্ত করে করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, নানা কারণে হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমে এসেছে।

এদিকে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালেও রোগী কমে এসেছে অর্ধেকের নিচে। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ২৫ জন। এখন পর্যন্ত ২১০ জন রোগী ভর্তি হয়ে ১৯৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ইনডোর-আউটডোর মিলে ফিল্ড হাসপাতাল সাড়ে ১৪শ’ আক্রান্তকে চিকিৎসা দিয়েছে।

রোগী কমে যাওয়ার বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হাসপাতালের (সিইও) ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, আগে মানুষ ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে ছিল। অল্পতে হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়েছে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যাদের উপসর্গ নেই বা মৃদু সংক্রমণ রয়েছে তারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন। সময়ের সাথে সাথে ভীতি, শঙ্কা দূর হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে আসছে।

ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালেও রোগীর চাপ কমে এসেছে। হাসপাতালটির ৩০ শয্যার মধ্যে ১৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রথমদিকে ২৭ থেকে ২৯ জন রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকতেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক আবুল হাসান চৌধুরী।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বর্তমানে ৩০৯ জন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রথমত এখন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কম। অনেকে আগে ভীতির মুখে হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইতেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ আর সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগছে না।

আরো সংবাদ