স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করোনাকালে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন

উচ্চ রক্তচাপের লোকদের কাছে এতদিনে এটা অজানা নয় যে, করোনাভাইরাস সংক্রমণে তারা মারাত্মক পরিণতির বাড়তি ঝুঁকিতে আছেন। এ কারণে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এই মহামারিতে বাড়তি সতর্কতাও জরুরি। এসময় রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এমন খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। যেসব খাবারে প্রচুর লবণ রয়েছে তা রক্তচাপ দ্রুত বাড়াতে পারে। এখানে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এমন খাবারের একটি তালিকা দেয়া হলো।

পাউরুটি: পাউরুটির একটি স্লাইচে ২৩০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ থাকতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের লোকদের জন্য দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রার ১৫ শতাংশ। উচ্চ রক্তচাপে ১,৫০০ মিলিগ্রামের চেয়ে বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। ইউনিভার্সিটি অব আরিজোনার (ফনিক্স) কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান মার্থা গুলাটি বলেন, ‘একটি স্যান্ডউইচ খাওয়া মানে পাউরুটির দুইটি স্লাইচ খাওয়া, এর ফলে লবণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এভাবে সকালে টোস্ট খেলে, দুপুরে স্যান্ডউইচ খেলে ও রাতে রোল খেলে লবণের মাত্রা দ্রুত বেড়ে বিপদসীমায় চলে যেতে পারে। তাই যথাসম্ভব এধরনের খাবার এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে রেস্টুরেন্টের খাবার।’

প্রক্রিয়াজাত মাংস: যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা মাংসের খাবার খেতে চাইলে ঘরে তৈরি করে খাওয়াই ভালো। বাইরে মাংসের যেসব খাবার পাওয়া যায় তাতে প্রচুর লবণ থাকে, যেমন- হট ডগস ও স্যান্ডউইচ। ডা. গুলাটি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন যে এসব মাংসে তেমন চর্বি নেই ও শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু এসব খাবারে ব্যবহৃত উচ্চ মাত্রার লবণ শরীরে পানি জমিয়ে তোলে ও রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।’

সুপারশপের মুরগির মাংস: আপনি হয়তো জানেন যে ফ্রোজেন ও ম্যারিনেটেড মুরগির মাংসে লবণ রয়েছে, কিন্তু আপনার হয়তো এটা জানা নেই যে সুপারশপে যেসব মুরগি বিক্রি করা হয় তাতে প্রচুর প্রিজারভেটিভ থাকতে পারে। ডা. গুলাটি বলেন, ‘মুরগিকে পুষ্ট ও সুন্দর দেখাতে স্যালাইন ওয়াটার ইনজেক্ট করা হয়। এতে যে শুধু লবণ থাকে তা নয়, শরীরের অন্যান্য ক্ষতিও করে।’

পিজ্জা: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পিজ্জা হার্টের ক্ষতির কারণ হতে পারে। পিজ্জার একটি স্লাইচে ৭০০ মিলিগ্রামেরও বেশি লবণ থাকতে পারে। আর পিজ্জা এতই লোভনীয় খাবার যে একটি স্লাইচেই নিজেকে সন্তুষ্ট করা কঠিন। পিজ্জা খেতে চাইলে ঘরে কম লবণ ব্যবহার করে বানিয়ে খেতে পারেন।

স্যূপ: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে রেস্টুরেন্টের স্যূপ খেতে যাবেন না। ডা. গুলাটি বলেন, ‘আমরা স্যূপকে স্বাস্থ্যকর মনে করলেও রেস্টুরেন্টের স্যূপ শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। একবাটি স্যূপে প্রায় ১,০০০ মিলিগ্রাম লবণ থাকতে পারে।’ রক্তচাপ আরো বাড়াতে না চাইলে নিজে স্যূপ তৈরি করে খান। নিজে খাবার তৈরি করলে লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।

আচার: উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা থাকলে আচার খাওয়া উচিত নয়। দোকানে আচারের যেসব বয়াম পাওয়া যায় তাতে প্রচুর লবণ রয়েছে। ভুলেও এসব আচার মুখে তুলবেন না। কিন্তু তাই বলে ভাববেন না ঘরের আচার নিরাপদ। ঘরে যে আচার তৈরি করা হয় তাতেও প্রচুর লবণ থাকে। তাই আচার বাইরের হোক কিংবা ঘরের হোক, এড়িয়ে চলুন।

সালাদ ড্রেসিং: সালাদ ড্রেসিংকে স্বাস্থ্যকর মনে হলেও এটা হলো লবণের গোপন উৎস। বোতলের সালাদ ড্রেসিংয়ে প্রচুর মাত্রায় লবণ থাকে। তাই এর পরিবর্তে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ও ভিনেগার ব্যবহার করুন- এতে লবণ নেই ও রক্তচাপ বাড়বে না। এর সাথে সরিষা, রসুন, হার্বস বা জেলি যোগ করে স্বাদ বাড়াতে পারেন।

রেস্টুরেন্টের খাবার: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ রক্তচাপে রেস্টুরেন্টের প্রত্যেক খাবারই এড়িয়ে চলা উত্তম। রেস্টুরেন্টগুলো খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে ভোক্তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করে, যা উচ্চ রক্তচাপের লোকদের জন্য ভালো খবর নয়। রেস্টুরেন্টের খাবার সম্পূর্ণ বর্জন করা সম্ভব না হলে অন্তত সেসব খাবার এড়িয়ে চলুন যেখানে সবচেয়ে বেশি লবণ ব্যবহার করা হয়, যেমন- স্যূপ, পুডিং, সালাদ ড্রেসিং, পিজ্জা, স্যান্ডউইচ ও সস।

আরো সংবাদ