স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

সময়মতো কোভিড-১৯ সনদ না পাওয়া : বিদেশযাত্রা বাতিল চট্টগ্রামের অর্ধশত প্রবাসীর

সময়মতো কোভিড-১৯-এর নেগেটিভ সনদ না পাওয়ায় নির্ধারিত ফ্লাইট মিস করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত অভিমুখী প্রায় অর্ধশত প্রবাসী। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে এসব যাত্রীর সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার কথা ছিল।

জানা গেছে, গতকাল ফ্লাইট মিস করা যাত্রীদের কভিড-১৯ সার্টিফিকেট প্রদানের সময় নির্ধারিত ছিল রোববার বেলা তিনটা। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তবে তারা কভিড-১৯ সনদ পান সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে। ততক্ষণে ফ্লাইটগুলো চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট এলাকার মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও এমিরেটস এয়ারলাইনসে ঢাকা থেকে আরব আমিরাত যাওয়ার কথা ছিল। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের নির্ধারিত ফ্লাইট ছিল সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। তবে বেলা ১১টার মধ্যেও কভিড-১৯ সনদ না পেয়ে হতাশ হয়ে তিনি বসে ছিলেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কক্ষে।

নুরুল ইসলাম জানান, রোববার বেলা তিনটা থেকে করোনা সনদের জন্য এসে এখনো পাইনি। এই একটি সনদের জন্য সারা রাত জেগে বসে ছিলাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের বাইরে খোলা মাঠে। শেষ পর্যন্ত ফ্লাইট মিস হয়ে গেল। এখন অন্য যে কোনো ডমেস্টিক ফ্লাইটে করে ঢাকায় গিয়ে এমিরেটসের ফ্লাইট ধরার চেষ্টা করছি। কিন্তু এখনো সার্টিফিকেট না পাওয়ায় সেই আশাও ক্ষীণ। অথচ টিকিট কিনতে হয়েছে নির্ধারিত দামের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে।

কোভিড-১৯ সার্টিফিকেটের জন্য বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দোতলায় ওয়েটিং রুম থেকে সার্ভার রুমে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী জয়নাল আবেদিন। তিনি বলেন, সকাল ৮টা ৪৫ ফ্লাইট ছিল। কিন্তু করোনা সার্টিফিকেট না পাওয়ায় ফ্লাইট মিস হয়ে গেছে। যে সার্টিফিকেট গতকাল বেলা ৩টায় পাওয়ার কথা তা আজো পেলাম না। কখন পাব তা-ও জানি না।

আরব আমিরাতে একটি ফার্নিচারের কারখানার এ কর্মী বলেন, জানুয়ারিতে ছুটিতে দেশে এসে করোনার কারণে আর কর্মস্থলে ফিরতে পারিনি। দীর্ঘ সাত মাস চাকরিতে অনুপস্থিত থাকায় চাকরি যায় যায় অবস্থা। অনেক অনুনয়-বিনয় করে কারখানা মালিককে বুঝিয়ে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ভিসার অনুমোদন নিয়েছি। তবে করোনা সনদ না পাওয়ার কারণে ফ্লাইট মিস করায় এখন বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।

চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ বিমানে ৯টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইট ছিল আরব আমিরাত প্রবাসী মো. নাজিম উদ্দিনের। গতকাল দুপুর ১২টার সময়ও করোনা সনদ পাননি তিনি। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বলেন, দেশে আমাদের প্রবাসীদের ন্যূনতম মূল্যায়নও নেই। একটি করোনা সনদের জন্য গত তিনদিন ধরে রাত-দিন কাটাচ্ছি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে।

গত শুক্রবার ভোর ৫টায় এসে টাকা জমা দেয়া ও ফরম পূরণ করতে সময় লেগেছে বেলা ২টা পর্যন্ত। পরদিন ভোরে করোনা টেস্টের নমুনা দিতে আসেন তিনি। শত শত প্রবাসীর জন্য মাত্র একটি বুথ হওয়ায় ওইদিনও নমুনা দিতে বিকাল পর্যন্ত সময় চলে যায়। আর গতকাল বেলা ৩টায় করোনা সনদের জন্য আসতে বললেও নির্ধারিত সময়ে কেউ সনদ হাতে পাননি।

তিন-চারশ প্রবাসী করোনা সনদের অপেক্ষায় রাত কাটিয়েছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে। রাউজানের গহিরা এলাকার আসাদুজ্জামানের সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে আরব আমিরাত যাওয়ার কথা থাকলেও করোনা সনদের জন্য তার গতকাল আর যাওয়া হয়নি। এ প্রবাসী বলেন, করোনা সনদ না পেয়ে অনেক যাত্রী সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আটকে থাকায় আমরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ফোন করে ফ্লাইট ১ ঘণ্টা দেরি করিয়েছি। তবে গতকাল থেকে সিভিল সার্জন বারবার আশ্বাস দিয়েও এখনো করোনা সনদ দেননি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের স্টেশন ম্যানেজার আরিফুজ্জামান খান বলেন, ঠিক সময়ে করোনা সনদ না পাওয়ায় সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের ফ্লাইট ১ ঘণ্টা দেরি করিয়েছি। কিন্তু এর পরও ওই ফ্লাইট মিস করেছেন ১৪ জন যাত্রী।

একই ফ্লাইট মিস করেছেন আলমগীর তালুকদার, মোহাম্মদ হারুন ও আব্দুল করিমসহ আরো অনেকে। যাত্রীদের অভিযোগ, সিভিল সার্জনসহ দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই বিদেশ যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। একটি করোনা সনদের জন্য অমানবিক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে গত চারদিন ধরে। করোনা সনদ না পাওয়ায় সকালের দুটি ফ্লাইটের প্রায় অর্ধশত প্রবাসী ফ্লাইট মিস করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সার্ভার ত্রুটির কারণে বিআইটিআইডি থেকে যথাসময়ে প্রবাসীদের রিপোর্টগুলো আপলোড করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আমরাও সময়মতো তাদের করোনা সনদ দিতে পারিনি। এতে ৩০ জনের মতো প্রবাসী ফ্লাইট মিস করেছেন। নিশ্চিতভাবে এটা প্রবাসীদের জন্য অনেক ক্ষতি ও দুঃখের বিষয়। এজন্য আমিও দুঃখ প্রকাশ করছি। সমস্যা সমধানে জনবল ও বুথ বৃদ্ধি এবং সার্ভার ত্রুটি দূর করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি।

সূত্র: বণিক বার্তা

আরো সংবাদ