স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জনগণ সব সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য পুনরায় স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশের জনগণ তাদের সব সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলে।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন। দেশি-বিদেশি চক্র যারা এই স্বাধীনতা চায়নি এবং এতে বিশ্বাসও করত না, এমনকি স্বাধীনতা অর্জনে কোনরূপ সহযোগিতা পর্যন্ত করেনি, তারাই ষড়যন্ত্র করে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরো বলেন, তিনি এবং তার ছোট বোন বিদেশে থাকায় ১৫ আগস্টের সেই ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যান। ‘কিন্তু দেশের জনগণ জাতির পিতাকে হত্যার পর তাদের সকল সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলে, ‘উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে জাতির পিতার গতিশীল নেতৃত্বে দেশ যখন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সে সময়ই তাঁকে হত্যা করা হয়।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ যাতে উন্নত জীবন পায় সেটাই তার সরকারের লক্ষ্য। সরকার জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করছে।

রোববার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর চত্বরে জাতীয় শোক দিবস ২০২০ উপলক্ষে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় প্লাজমা-রক্তদান কর্মসূচি, এতিম ও অনাথদের মাঝে ঈদ উপহার, মৌসুমী ফল ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।

এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের মাসব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মহামারির সময় সরকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। গরিব, এতিম ও অসহায়দের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সরকার।

করোনা সংকট মোকাবিলায় দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, করোনার এই সময়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, ভালো কাজ করছে। এ সময় দল ও সহযোগী সংগঠন নেতাকর্মীদের বন্যাকবলিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান তিনি।

শোকাবহ আগস্ট মাসের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘এই মাসে আমি আমার সবাইকে হারিয়েছি। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান নেতাকর্মীরা। এরপর সেখানে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, আজ গোটা জাতি যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্যোগ মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সফলতা দেখাচ্ছে, তখন ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মতলবি মহল সরকার ও জনগণের দুর্ভেদ্য ঐক্যের দুর্গে ফাটল ধরানোর অপচেষ্টা করছে। তারা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এ ধরনের কূটকচাল দিয়ে আসছে। দুর্যোগের মত এ ধরনের দুরভিসন্ধি মোকাবিলায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মানবসভ্যতা বিধ্বংসী সব ধরনের দানবীয় অপশক্তির বিরুদ্ধে মানবের জয় হবেই হবে, ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা জয় করে মহাদুর্যোগের এই সময়ে জনগণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তার নির্দেশে দলীয় নেতাকর্মীরা যখন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন, তখন মিডিয়ার কল্যাণে টিকে থাকা বিএনপি সরকারের সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগস্ট এলেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে পুরো জাতি। তার নিরাপত্তা নিয়ে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

আগস্ট মাসজুড়ে দলের কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে অশ্রুসিক্ত বেদনাবিধুর আগস্টের কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। করোনা সংকট থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টার মাঝে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতের ফলে আমাদের জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে। করোনার সময়ে আম্পানের আঘাতের পরে বন্যার প্রকোপ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা।

কাদের বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে বাঙালি জাতির প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দৃঢ় মনোবল রয়েছে। তাই যেকোনো দুর্যোগে আমরা নিরাশ হই না। করোনাকালীন এই মহাদুর্যোগের সময়ও পরাভবহীন ও অকুতোভয় চিত্তে পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাঙালি জাতির আশার প্রদীপের সলতেটি জ্বালিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেকোনো দুর্যোগকে এড়িয়ে না গিয়ে জাতির অভিভাবক হিসেবে সুদক্ষ নাবিকের মতো হাল ধরেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের সমগ্র বিশ্ব আজ থমকে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশও কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। তাই বাংলাদেশও এই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কোভিড-১৯’র বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। এই কোভিড-১৯’র ভয়কে জয় করে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মাকে শান্তি দেবোই দেবো।

কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বিশ্বনাথ সরকার বিটু প্রমুখ।

আরো সংবাদ