স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে আনতে না পারা গ্লানির: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম

বঙ্গবন্ধু হত্যার পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনতে না পারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য ‘গ্লানির’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

বুধবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আয়োজনে ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশ: বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন’ শীর্ষক এক ওয়েবনিয়ারে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে না পারাটা যে কত বড় গ্লানি জাতি হিসেবে… তার চেয়ে অনেক বড় গ্লানি কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইনস্টিটিউশন হিসেবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্য। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এতে করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা ছাড়া পেয়ে যায়।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খোলে। তখন বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের গতি শ্লথ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি)।

সর্বশেষ বাকি পলাতক ছয় খুনির মধ্যে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি এখনো বিদেশে পালিয়ে আছেন। তারা হলেন- খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও এ এম রাশেদ চৌধুরী। এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে ও নূর চৌধুরী কানাডায় আছেন। বাকি তিনজন কোথায় আছেন, সে সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত তথ্য নেই।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরী ছাড়া বাকিরা পাকিস্তান, লিবিয়া অথবা মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিগ্রহ লেগে থাকা দেশগুলোতেই লুকিয়ে আছেন।

শাহরিয়ার আলম জানান, আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক কূটনীতি জোরদার করেছি এদেরকে খুঁজে বের করার জন্য। আশা করছি, তাদের অবস্থান আমরা চিহ্নিত করতে পারব। তবে একটি বড়, একটি টেকনিক্যাল ইস্যু আছে, বিশেষ করে তিনজন, নূর ও রাশেদ চৌধুরী ছাড়া বাকি তিনজন তারা নাম পাল্টে ফেলেছেন। তারা পাকিস্তানি বা অন্য দেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন, সে তথ্য আমরা একটা সময় পর্যন্ত পেয়েছিলাম। তারপর সরকারের ধারাবাহিকতার অভাবের কারণে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি। তবে আমরা এগিয়ে যাব।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘একটি কথা আমি বলি, ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে কখনোই সফল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দাবি করতে পারব না যতদিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর শেষ খুনিটিকে আইনের মুখোমুখি করিয়ে দিতে না পারব আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।’

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ। অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন গবেষক ও কলামনিস্ট সৈয়দ বদরুল আহসান, লেখক-গবেষক হাসান মোরশেদ, সাংবাদিক ও কলামনিস্ট সুভাষ সিংহ রায়, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের আরএমআইটির অধ্যাপক শামস রহমান।

আরো সংবাদ