স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

নোয়াখালীতে গৃহবধূকে বিবস্ত্র নির্যাতন: মূলহোতা কে এই দেলোয়ার?

গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ঘটনার মূলহোতা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে সোমবার (৫ অক্টোবর) সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক করে র‌্যাব-১১।

এর আগে রোববার রাতে নির্যাতিত গৃহবধূর দায়ের করা মামলায় ৯ জন আসামির মধ্যে দেলোয়ারের নাম নেই কেন? জনমনে নানা প্রশ্ন। কেন, কীভাবে, কোন খুঁটির জোরে, কোন রাজনৈতিক ছত্রছায়ার প্রভাবে মামলা থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে দেলোয়ার!

দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কানাঘুঁষা চলছে। একটি বাহিনীর প্রধান, দুই বছর পূর্বের একটি ডাবল মার্ডার মামলার আসামী এবং ঘটনার মূলহোতা হয়েও দেলোয়ার কি তাহলে পার পেয়ে যাবে?

এর প্রতিবাদে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে উঠছেন দেলোয়ার ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। কে এই দেলোয়ার- একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মধ্যম একলাশপুর গ্রামের কামাল উদ্দিন ব্যাপারী বাড়ির সাইদুল হকের ছেলে।

দেলোয়ারের উত্থান যেভাবে:

২০১৮ সালে একলাশপুর বাজারের পূর্ব পাশের ভিআইপি রোড এলাকায় মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। জোড়া খুনের দায়ে দেলোয়ার গ্রেফতার হবার পর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি ও গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত জনবিচ্ছিন্ন আলমগীর কবির আলো নিজের অবস্থান ধরে রাখতে দেলোয়ারকে জামিনে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে আসে।

দেলোয়ারকে জামিনে নিয়ে এসে তাকে ব্যবহার করে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে চেষ্টা করে আলমগীর কবির আলো। তাকে দিয়ে একটা গ্রুপ সৃষ্টি করে। সে গ্রুপে চোর, ছিনতাইকারী, সিএনজি ড্রাইভার, মাদকাসক্ত সব একসাথ হয়। আলো এদের নিয়ে যায় নেতাদের কাছে।

আস্তে আস্তে এরা একটার পর একটা অপকর্ম করেই যাচ্ছে। এদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। বড় বড় নেতাদের ড্রয়িংরুম থেকে এরা আস্তে আস্তে বেডরুম পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে।

এরপর দেলোয়ার একটি বাহিনী সৃষ্টি করে ওই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা মাদক ব্যবসা, হত্যা, নারীদের যৌন হয়রানি নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করে আসছিলো।

এতদিন কেউ ভয়ে মুখ না খুললেও এখন দেশব্যাপী আলোচিত সমালোচিত গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর অনেকেই দেলোয়ার বাহিনীর অপকর্ম বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারের গ্রেফতারের খবরে এলাকায় স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানা গেছে। সেই সঙ্গে তাদের দ্রুত সাজা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

বর্বরোচিত এই নারী নির্যাতনের ঘটনার মাধ্যমে আলোচনায় এলেও এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ছিলো দেলোয়ার।

জানা গেছে, কোনও পদ না থাকলেও অনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে দেলোয়ার ও বাহিনীর সদস্যরা।

বছরখানেক আগের পেশায় সিএনজিচালক দেলোয়ার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাতারাতি বনে যায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ একটিন সন্ত্রাসী বাহিনী। তারপর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন এই দেলোয়ার। এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করলেও প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি কেউ। তাই তাদের আটকের খবরে স্বস্তি ফিরে আসে এলাকায়।

এলাকাবাসীদের একজন বলেন, উচিত বিচার দিয়েন। আজকে আমার বোনেরে ধর্ষণ করছে কাল মারে করবে পরশুদিন আরেকজনকে করবে।

আরেকজন বলেন, আজকে তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।

আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও কোনও পদে না থেকেও তার দাপটে কোণঠাসা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

একজন আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করি কিন্তু এদেরকে কখনও দেখিনি আওয়ামী লীগ করতে। যারা সন্ত্রাসী কাজ করছে তারা নিজের স্বার্থে দলকে ব্যবহার করে।

নোয়াখালী বেগমগঞ্জ এখলাশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আরেক এক সদস্য বলেন, আলমগীর কবির আলো এই দেলোয়ারকে আওয়ামী লীগে যোগ দান করিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এরপর থেকে এলাকায় তার অপকর্ম বেড়ে যায়।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, এ ঘটনায় দেলোয়ার সহ জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তবে আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে থেকেই দেলোয়ার একাধিক খুন ও মাদক মামলার আসামি বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ঘটনার ৩২ দিন পর গৃহবধূকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেলে তা ভাইরাল হয়ে গেলে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। ঘটনার পর থেকে গত ৩২ দিন অভিযুক্ত স্থানীয় দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতিতা গৃহবধূর পরিবারকে কিছু দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে তার পুরো পরিবারকে বসত বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলে পুরো ঘটনা দীর্ঘদিন স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসনের অগোচরে থাকে। পরে ঘটনার জানাজানি হলে পুলিশ ও র‌্যাব কয়েক দফায় অভিযান পরিচালনা করে প্রধান আসামিসহ এ পর্যন্ত ৬ আসামিকে আটক করেছে।

আরো সংবাদ