স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

এবার বিমানের পুকুরচুরি ধরতে দুদকের জাল!

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৃত ও প্রদর্শিত আয়ে বড় ধরনের ফারাকের অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগে বলা হয়েছে, বিমানের বিভিন্ন ইউনিটে প্রকৃত আয়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ আয় কম দেখানো হয়েছে।

এর আগে, বিমানেরই নিজস্ব তদন্তে এই পুকুরচুরি ধরা পড়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে বিমানের এক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলে। এ কারণে নিরপেক্ষ কোনো সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করার সুপারিশও ছিল বিমানের প্রতিবেদনে।

বিমানের আয়ে পুকুরচুরির অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে সম্প্রতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এরই মধ্যে অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বেশকিছু নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বিমানের ঊর্ধ্বতন বেশকিছু কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। অনুসন্ধানের কাজ এখনো অনেক বাকি।’

এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বেশ কয়েকটি অনুসন্ধান ও তদন্ত দুদকে চলছে।  অনুসন্ধান শেষে চূড়ান্ত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১২০ ফ্লাইট অবতরণ করে থাকে। এরমধ্যে বাংলাদেশ বিমানের ১৫ ফ্লাইট রয়েছে, বাকিগুলো দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের।  ৩০টির মতো কার্গো ফ্লাইটও ওঠানামা করে।

একটি বিদেশি উড়োজাহাজে একঘণ্টা বিদ্যুৎ সার্ভিস নিলে বিমানকে জিপিইউ বাবদ ভাড়া দেয়। যেখান থেকে মাসে বিমান ১৫ কোটি টাকা আয় করলেও দেখানো হচ্ছে ৮ কোটি টাকা। এয়ারকন্ডিশন ইউনিট থেকে মাসে ২৫ কোটি টাকার আয় হলেও দেখানো হয় ১০ কোটি টাকা। একইভাবে এয়ারক্রাফট পুশ টো-ট্রাক্টর থেকে ৫ কোটি টাকার আয়কে দেখানো হয় ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা, ওয়াটার সার্ভিস ট্রাক থেকে ৫ কোটি টাকার স্থলে ৩ কোটি টাকা, মেইন ডেক কার্গো লোডার থেকে  ৪ কোটি টাকার বদলে ৩ কোটি, ট্রলি সার্ভিস ট্রাক থেকে মাসে সাড়ে ৬ কোটির স্থানে  ৪ কোটি, কনভেয়র বেল্টের ৮০ লাখ টাকার বদলে ৫০ লাখ টাকা, ফর্ক লিফট থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকার স্থানে আড়াই কোটি টাকা দেখানো হয়।

অন্যদিকে রযেছে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনার অভিযোগ। কয়েক বছর আগে বিদেশ থেকে ৩টি স্মার্ট কার্ড কেনা হয় ৫ লাখ ৫ হাজার মার্কিন ডলারে। বছরখানেক পরেই নষ্ট হয়ে যায়। ৯৫ লাখ টাকায় কেনা দুটি এসিভ্যান কয়েক মাসের মাথায় বিগড়ে যায়। এরপর ঠিক করার জন্য ২০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি আনলেও কাজ হয়নি। ৯ কোটি টাকায় কেনা ৪টি সিপিএল মেশিন নষ্ট হওয়ার পর আর মেরামত করা হয়নি।

এছাড়া, প্রতিবছরই হজের অজুহাতে শেষ মুহূর্তে চড়াদামে তাড়াহুড়া করে উড়োজাহাজ লিজে নেয় বিমান। যার সঙ্গে রয়েছে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ। বিমানের অস্থায়ী পদে নিয়োগে মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে জাল ও ভুয়া ডিও লেটার দিয়ে একটি চক্র নিয়োগবাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের তীর বিমানের এক প্রভাবশালী জিএম, প্রশাসন, সিকিউরিটি, এমপ্লয়মেন্ট ও বিএফসিসি শাখার ১০ থেকে ১৬ জনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

আরো সংবাদ