স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

কর্ণফুলী নদীর তীর ইজারা কেন?— প্রশ্ন মন্ত্রী

 ব্যবসা করার জন্য কর্ণফুলী নদীর তীর ইজারা দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক আলোচনা সভায় মন্ত্রী কর্ণফুলী নদীর তীর ইজারা দেওয়ার বিরুদ্ধে নিজের মত তুলে ধরেন। কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, দখল ও দূষণ রোধে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে এই আলোচনা সভায় আরও দুই প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু এই নদী তীরের ৮০ কিলোমিটার জুড়ে অন্তত ৮০টি কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা রয়েছে। পেপারমিল, তেল শোধনাগার, পাওয়ার প্লান্ট, ট্যানারি, সার, সাবান, সিমেন্ট কারখানা আছে। এসব কারখানা এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, সেখান থেকে বর্জ্য নদীতে চলে আসে। এসব কারখানায় তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) আছে কি-না খতিয়ে দেখা হবে অথবা থাকলেও এগুলোর ব্যবহার হচ্ছে কি না যাচাই-বাছাই করা হবে।’

ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য কর্ণফুলী নদীর তীর কেন লিজ দেওয়া হবে? এমন প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, ‘এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের স্বার্থে সরকারের বিরুদ্ধেও কথা বলতেন। উনার মধ্যে বেসিক দেশপ্রেম ছিল এবং এটা প্রধানমন্ত্রী উপলদ্ধি করতেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পর চট্টগ্রামের স্বার্থরক্ষায় এভাবে আর কেউ ভূমিকা রাখেনি।’

কর্ণফুলী নদী রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে চট্টগ্রামের সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ণের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন মন্ত্রী।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা, জোয়ারের পানি থেকে চট্টগ্রাম নগরকে রক্ষা করার জন্য সিটি আউটার রিং রোডের কোনো বিকল্প নেই। সিডিএ’র তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম মহানগর রক্ষাকারী বিদ্যমান উপকূলীয় বাঁধের ওপর চার লেনের এবং ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। বাঁধের বিদ্যমান উচ্চতা কমপক্ষে ১০ ফুট পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান আছে। করোনাকালেও এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়নি। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগুচ্ছে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘জনসাধারণ ও প্রতিষ্ঠানের করের টাকায় সিটি করপারেশন চলে। আগে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলতেন, সিটি করপোরেশনকে আয়বর্ধক করতে হবে। তিনি করেও গিয়েছিলেন, কিন্তু তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এখন সরকার সিটি করপোরেশনকে সহায়তা দিচ্ছে। এরপরও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যে আর্থিক সংকট আছে, সেটা সমাধানের জন্য আমরা মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি বিশেষভাবে দেখছি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর মূল্যায়নে চট্টগ্রাম বন্দরের বার্ষিক কর ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা ধার্য্য করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানে বার্ষিক কর দেয় মাত্র ৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা আয় করে, সেখানে চসিকের প্রাপ্য ট্যাক্স দেবে না কেন? আমরা মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেব।’

একই সভায় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘চট্টগ্রাম নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যেসব প্রকল্প আছে সেগুলো বাস্তবায়নের পথে। তবে কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে। পর্যায়ক্রমে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে। ওয়াসার বিদ্যমান প্রকল্পে সুয়ারেজ সিস্টেম যেন কর্ণফুলী নদীমুখী না হয়, তাহলে এই নদী দূষণ থেকে রক্ষা পাবে।’

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের ‍উন্নয়নে অনেক আন্তরিক। চট্টগ্রামে যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলো তার আন্তরিকতারই বহিঃপ্রকাশ। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কথা মাথায় রেখে চট্টগ্রামের সব সরকারি সংস্থাকে এসব প্রক্ল্প বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের রাস্তাঘাটের ধারণক্ষমতা ছয়টন। অথচ এখানে বন্দরকেন্দ্রিক গাড়িগুলো চলছে ৬০ টনের বোঝা নিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দরমুখী সড়কগুলো একারণেই প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে। আমার প্রশ্ন, বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ৩৫০ কোটি টাকার বেশি তহবিল থেকে এক শতাংশ হারে সিটি করপোরেশনকে দেবে না কেন?’

সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক সাংসদ ওয়াসিকা আয়েশা খান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শেখ মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সালেহ আহমদ তানভীর, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক তাহেরা ফেরদৌস, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম, প্রশাসকের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেমও বক্তৃতা করেন।

আরো সংবাদ