ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদ-সংক্রান্ত চুক্তি যেভাবে শেষ মুহূর্তে সম্ভব হয়েছিল, এখন বিচ্ছেদ-পরবর্তী ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে বোঝাপড়াও ঠিক সেভাবেই সফল করতে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গত মঙ্গলবার দুই পক্ষের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। খবর: ডয়চে ভেলে।
চলতি মাসেই দুই পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য না হলে ১ জানুয়ারি সেই চুক্তি কার্যকর করার জন্য যথেষ্ট সময় থাকবে ন। জনসন ১৫ অক্টোবরের মধ্যে আলোচনা শেষ করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। সেই দিনই ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। যথেষ্ট অগ্রগতির সম্ভাবনা থাকলে প্রয়োজনে আলোচনা নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড়াতে পারে। এভাবে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট এড়ানোর শেষ চেষ্টা চালানো হবে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রকে উদ্ধৃত করে দাবি করছে, ইইউ ও ব্রিটেন পরস্পরের নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। এ-সংক্রান্ত ১০টির মধ্যে ৯টি খুঁটিনাটি বিষয়ে নীতিগত বোঝাপড়া সম্ভব হয়েছে। তবে মাছ ধরার অধিকার, ন্যায্য প্রতিযোগিতার গ্যারেন্টি ও ভবিষ্যতে সংঘাত মেটানোর প্রক্রিয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে মতপার্থক্য এখনও কাটছে না। সেই সূত্র অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের আশঙ্কা প্রকাশ করলেও চুক্তির সম্ভাবনা আসলে বাড়ছে। এ রিপোর্ট প্রকাশের পর ইউরোর তুলনায় পাউন্ডের বিনিময় মূল্যের পতন কিছুটা কমে গেছে।
গতকাল বুধবার থেকে লন্ডনে আবার দুই পক্ষের মধ্যস্থতাকারীদের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। বিশাল অঙ্কের লোকসান প্রতিরোধ করতে শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো বোঝাপড়ার জন্য চাপ দিলেও শেষ পর্যন্ত চুক্তিসহ ব্রেক্সিট কার্যকর হবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। ফলে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারোস সেফকোভিচ ইউরোপীয় পার্লামেন্টকে জানিয়েছেন যে চুক্তির জন্য হাতে সময় খুবই কম। তিনি পরিস্থিতি আরও জটিল করার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে দায়ী করেন। উল্লেখ্য, জনসন গত মাসে ব্রেক্সিট চুক্তি ভঙ্গ করে বিতর্কিত একটি আইন প্রণয়ন করায় ইইউ তার কড়া সমালোচনা করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে সেফকোভিচ ব্রিটেনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
চলমান করোনা সংকট ও চুক্তিহীন ব্রেক্সিট ব্রিটেনের অর্থনীতির জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, তার এক পূর্বাভাস তুলে ধরেছে বেকার ম্যাককেনজি নামের এক প্রতিষ্ঠান।
তাদের হিসেব অনুযায়ী এমন পরিস্থিতিতে আগামী এক দশকে প্রতি বছর ব্রিটেনের জিডিপি ১৩ হাজার ৪০০ কোটি পাউন্ড কমে যাবে।