খেলোয়াড় তৈরির এক সময়ের সুতিকাগার চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ‘মুজিববর্ষ ফুটবল টুর্নামেন্ট’ উদ্বোধন করেন তিনি।
এ সময় স্মৃতিচারণ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সময় ফুটবল নিয়ে প্রচণ্ড মাতোয়ারা ছিল, প্রচণ্ড উত্তেজনা ছিল। গ্যালারির এক পাশে এক দলের সমর্থকরা, আরেক পাশে আরেক দলের সমর্থক অবস্থান নিতেন। আবাহনী ও মোহামেডান দখল করে রাখতো।’
‘আমার যখন ১২-১২ বছর বয়স তখন আউটার স্টেডিয়ামে খেলতাম। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে যখন খেলা হতো, ওই বয়সে প্রতিদিন বাবা-মায়ের কাছে টাকা চাওয়া যেত না। অনেক সময় যেটি হতো, পকেটে পয়সা নেই, তখন স্টেডিয়ামে পানি যাওয়ার জন্য বড় বড় ড্রেন ছিল, ওগুলো শীতকালে শুকনো থাকতো। ড্রেনটি ময়লা যাওয়ার জন্য নয়, স্টেডিয়ামের পানি যাওয়ার জন্য। আমরা এত ছোট ছিলাম যে, ওই ড্রেনের ভেতর দিয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকে যেতাম।’
‘আর তখন দোতলা গ্যালারি ছিল না। গ্যালারিগুলো একতলা এবং খুব উঁচু ছিল না। একজনের পিঠের সাথে পিঠ লাগিয়ে আউটার স্টেডিয়ামে ঢুকতাম। এখন কিশোরদের সেটি করার সুযোগ নেই। স্টেডিয়ামের গ্যালারিও দোতলা হয়ে গেছে। আজকে সুযোগ পেয়ে সেই স্মৃতিচারণ করছি।’ যোগ করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বর্তমানে নানাভাবে সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, এই অবক্ষয়ের হাত থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করার জন্য খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি এবং বিনোদন অ্যাপসগুলোর আসক্তি থেকে আমাদের তরুণ সমাজকে বের করে আনতে হবে।
‘বর্তমানে ছেলেরা এখন আর মাঠে গিয়ে খেলে না। আমরা ছোটবেলায় মাঠে গিয়ে খেলার জন্য আর সন্ধ্যার আগে বাসায় না ফেরার জন্য প্রতি সপ্তাহে মা-বাবার বকা শুনতাম। অনেক সময় চড়-থাপ্পরও খেতাম। আর এখনকার ছেলেদের জোর করে মাঠে পাঠাতে হয়। উল্টো হয়ে গেছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আসলে খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। সেজন্য খেলাধুলার আয়োজনও করতে হবে। আয়োজন না থাকলে ছেলে-মেয়েরা তো খেলাধুলা করবে না।
‘কিশোর গ্যাং ধর্ষণ করছে, বিভিন্ন জায়গায় নানা অপরাধের সাথে কিশোর গ্যাংরা যুক্ত হচ্ছে, এটি থেকে রক্ষা করার বড় উপায় হচ্ছে পাড়ায় পাড়ায় খেলাধুলার ব্যাপকতা করা। এটি অত্যন্ত প্রয়োজন। এছাড়া করোনাকালে আমরা যেভাবে স্থবির হয়ে গেছি এটি বেশিদিন রাখা যায় না। স্থবিরতা কাটানোর জন্য খেলাধুলার বিকল্প নেই। খুব সহসা চট্টগ্রামে লীগ খেলার আয়োজন করা প্রয়োজন।’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে খেলাধুলার মাঠের অপ্রতুলতা আছে। আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি, চট্টগ্রামে খেলার মাঠ আরও কিভাবে বাড়ানো যায়। স্টেডিয়ামের জন্য কিছু জায়গা আছে, সেগুলো উন্নয়ন করার জন্য আমরা চিন্তাভাবনা করছি। খেলাধুলা যাতে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ছাড়া অন্য জায়গায়ও করা যায়, সেটার জন্য আমরা চিন্তাভাবনা করছি।
‘মুজিববর্ষ ফুটবল টুর্নামেন্ট’ উদ্বোধনের সময় ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, অনেকেই হয়তো জানেন না, বঙ্গবন্ধু নিজেই ফুটবল খেলতেন। বঙ্গবন্ধু যখন স্কুলের ছাত্র তখন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফুর রহমান। এবং শেখ লুৎফুর রহমানের টিমের সাথে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন টিমের খেলা হয়েছিল টুঙ্গিপাড়ায়। সেই খেলায় বাবার টিমকে তিনি হারিয়ে দিয়েছিলেন। এটা অনেকেই জানেন না।
প্রসঙ্গত সাবেক সিটি মেয়র ও সিজেকেএস সেক্রেটারি আ জ ম নাছির উদ্দীনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সিজেকেএস এর চার সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত ডা. কামাল এ খান, এস.এম. কামাল উদ্দিন, রফিক আহমদ চৌধুরী ও আবু তাহের পুতু এ চার ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের নামে চারটি দল এ টুর্নামেন্টে খেলছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিজেকেএসের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, টুর্নামেন্ট কমিটির সভাপতি নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান, সিজেকেএসের সহ-সভাপতি দিদারুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রামে প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।