স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

নগর চষে বেড়াচ্ছেন চসিক প্রশাসক সুজন

চট্টগ্রাম মহানগরীতে চষে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ হোসেন সুজন। নগরবাসির সব ধরনের সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, এমনিতে শুকনো মৌসুমে নগরীতে ধুলোবালির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তার উপর নগর জুড়ে ওয়াসাসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার রাস্তা খুড়াখুড়ির কারণে এই প্রকোপ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

আজ রবিবার (১৮ অক্টোবর) নগরীতে অব্যাহত ধুলোবালি রোধে চসিকের উদ্যোগে টাইগারপাস মোড় থেকে আগ্রাবাদ বাদামতল মোড় পর্যন্ত রুটে পানি ছিটানোর কর্মসূচি উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় সুজন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন সেবাসংস্থা একযোগে নগরীতে কাজ করছে। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে এর সুফল ভোগ করবেন নগরবাসী। তবে অবশ্যই জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কারণ এই ধুলোবালি থেকে বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শ্বাস কষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। তাই নগরীকে ধুলোবালি ও দুষণমুক্ত করার জন্য সড়কগুলোতে পানি ছিটানো কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।

তিনি সরকারি, বেসরকারি, স্বায়িত্বশাসিত সংস্থা ও  প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ওয়াসা, বন্দর, ফায়ার সার্ভিস, সিডিএ, সেনা,  বিমান ও নৌ বাহিনীর অফিস ও নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান  এবং তেল শোধনাগারের সামনে নিজ নিজ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রতিদিন ধুলোবালির প্রকোপ থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করার জন্য পানি ছিটানোর আহ্বান জানান। এ কার্যক্রম যথাযথ ভাবে চললে নগরীর পরিবেশ সহনীয় ও স্বাস্থ্যবান্ধব থাকবে।

“আমার নগর আমি পরিস্কার রাখব” এই স্লোগানকে ধারণ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগকে সার্বক্ষণিক সক্রিয় থাকার নির্দেশনা প্রদান করেন।

এসময় প্রশাসকের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক, অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরীসহ কর্পোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা,  রাজনীতিক ও স্থানীয় এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেল চসিক প্রশাসক সুজনের নগরসেবায় ক্যারাভান কর্মসূচি। ১৮০ দিনের জন্য চসিকের দায়িত্ব পেয়ে নগরবাসীর সমস্যা-অভিযোগের কথা শুনতে এবং সরেজমিনে দেখে সমাধান করতে স্কুটি চড়ে নগর পরিভ্রমণ শুরু করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি একা নন, সঙ্গে নিয়েছেন সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান এবং তাদের টিমকেও। সুজন প্রতিটি ওয়ার্ড পরিদর্শন করার পরিকল্পনা নিয়ে গত ২৪ আগস্ট থেকে নগরীর বহদ্দারহাট মোড় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি। এর নাম তিনি দিয়েছেন ‘নগরসেবায় ক্যারাভান’।

এসময় সুজন বলেন, নগরসেবায় ক্যারাভান একটি সামাজিক আন্দোলন। এই আন্দোলনের সূত্র ধরে আমি সামাজিক মঙ্গল চাই। আমি যে এলাকাগুলোতে যাচ্ছি, সেখানে সমস্যার সূত্রগুলোকে নির্মূল করার চেষ্টা করছি। পরের দিনই সে সমস্যাগুলো আবার তৈরি হয়। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই আমার উদ্যোগে সতীর্থ হোন।

দায়িত্ব গ্রহণের ১৯ দিনের মাথায় (২৪ আগস্ট) সুজনের ব্যতিক্রমধর্মী এই কর্মসূচি নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল ও আলোচনা শুরু হলেও ব্যাপক জনপ্রিয় পেয়েছেন সুজনের এই ক্যারাভান কর্মসূচি। চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, খানাখন্দ, নষ্ট সড়কবাতি, বর্জ্য জমে থাকাসহ যেসব কারণে নাগরিক দুর্ভোগ তৈরি হয়, সেগুলো আমি সচক্ষে দেখতে চাই। দেখে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেব। নগরবাসীর সঙ্গে যেন তাদের প্রশাসকের কোনো দূরত্ব না থাকে, তারা যেন অভাব-অভিযোগ সরাসরি আমাকে বলতে পারে, সেজন্য আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি। নগরীর বিভিন্ন সড়কসহ অলিগলিতে স্কুটি চালিয়েই ঘুরছেন খোরশেদ আলম সুজন।

এসময় তার সঙ্গে কোনো নিরাপত্তার টিম নেই। শুধু বিদ্যুৎ, প্রকৌশল, পরিচ্ছন্ন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধান এবং তাদের টিম পৃথক গাড়িতে ছিল। সুজন বলেন, আমার মেয়াদ নির্দিষ্ট। সময় বেশি নেই। আমি এক মিনিটও ঘরে বসে থাকতে চাই না। আমি মানুষের অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক সমাধান করতে চাই।

এই কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন কিংবা সম্ভব হলে দুই দিন প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যাব। এর মধ্যেই আবার মাঝে মাঝে বিভিন্ন অলিগলিতে যাব। আমি কোথায় যাব, সেটা আগে থেকে জানাব না। তাৎক্ষণিকভাবে যাবো, সমস্যা দেখে সমাধান করব। এটা ধারাবাহিকভাবে চলবে।

নগরীর উৎসুক লোকজন সুজনের এই কর্মসূচির প্রশংসা করেন। স্থানীয় ফল দোকানি মো. হাশেম বলেন, উনি (খোরশেদ আলম সুজন) অন্তত চেষ্টা করছেন। আগের মেয়রদের তো গাড়ি থেকে নামতে দেখিনি। শুধু বড় বড় বক্তৃতা দিয়েছেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পর উনাকেই আন্তরিক দেখছি। মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন পরিষদ বিদায় নেয়।

এর আগে, গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সেটি স্থগিত করা হয়েছে। পরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে সরকার ১৮০ দিনের জন্য সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। গত ৬ আগস্ট তিনি দায়িত্বভার নেন।

আরো সংবাদ