স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

যে পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

আর মাত্র নয়দিনের অপেক্ষা। এরপরই বিশ্ববাসী আরেকবার বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক ঘটনার স্বাক্ষী হবেন। তারা দেখবেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কে প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।

এক্ষেত্রে নিয়ম হল সাধারণ নির্বাচনে যিনি জয়ী হবেন তিনি আরো একমাস অপেক্ষায় থাকবেন। কারণ সেখানকার ইলেক্টোরাল কলেজ সদস্যদের চুড়ান্ত ভোটেই নির্বাচিত হবেন তিনি।

বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন নির্বাচনে মূলত সাধারণ ভোটারদের ভোটে নয় বরং তাদের দ্বারা নির্বাচিত প্রার্থীকে ইলেক্টোরাল কলেজই চূড়ান্তভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেন। যদিও গত ২০০০ সালে এই নিয়মের ব্যতয় ঘটেছিল।

ইলেক্টোরাল কলেজ হল মূলত এক দল নির্বাচন কর্মকর্তা যারা পরোক্ষভাবে বিজয়ী প্রার্থীদের মূল নির্বাচকের ভূমিকা পালন করেন। তাদের কাজ হল সাধারণ ভোটে জয়ী হওয়াদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের চূড়ান্ত টিকেট দেয়া। এইসব নির্বাচনী কর্মকর্তারা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ পরে একত্রিত হন তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য।

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে সারা দেশে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান ইলেক্টোরাল কলেজ তাকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করে। কিন্তু সবসময় এমন নাও হতে পারে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।

সিএনএনের তথ্যমতে, ইলেক্টোরাল কলেজে থাকে মোট ৫৩৮ জন সদস্য। এই সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের রাজ্যের প্রতিনিধি। প্রতিটি রাজ্যে প্রতিনিধি পরিষদে যে ক’জন সদস্য থাকেন; সেই অনুযায়ী নির্ধারিত হয় রাজ্যের ইলেক্টোরাল কলেজ সদস্যের সংখ্যা। এক্ষেত্রে সংখ্যাটি নির্ধারিত হয় একটি রাজ্যের জনসংখ্যার ওপর।

তাই যে রাজ্যের জনসংখ্যা যতো বেশী সেই রাজ্যের ইলেক্টোরাল কলেজ প্রতিনিধি ততো বেশী। আবার যেখানে জনসংখ্যা কম সেখানে ইলেক্টোরাল কলেজ সদস্যও তুলনামূলক কম। এই যেমন, জনবহুল ক্যালিফোর্নিয়ায় রয়েছে ৫৫ জন প্রতিনিধি, আবার কম জনসংখ্যার মন্টানায় রয়েছে মোটে ৩ জন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন প্রার্থীরা সারা দেশে ভোটারদের কাছ থেকে যেসব ভোট পান সেগুলোকে বলা হল পপুলার ভোট। আর ইলেক্টোরাল কলেজ যেই ভোট দেন তা ইলেক্টোরাল ভোট হিসেবে পরিচিত। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো একটি রাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পাবেন তিনি ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে যাবেন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ক্যালিফোর্নিয়ায় ডেমোক্রেট প্রার্থী যদি ৫০.১% ভোট পান, তাহলে ওই রাজ্যের ৫৫টি ইলেক্টোরাল ভোট সে দলের ঘরেই যাবে। মোট ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ৫৩৮ টি। তাই কোন প্রার্থীকে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার জন্যে ২৭০টি ভোট পেতে হবে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে ১২টি, মন্টানায় ৩টি, নর্থ ডাকোটায় ৩টি, মিনেসোটায় ১০টি, উইসকনসিনে ১০টি, মিশিগানে ১৬টি, নিউ ইয়র্ক ২৯টি, ভারমন্টে ৩টি, নিউ হ্যাম্পশায়ারে ৪টি, মেইনে ৪টি, ম্যাসাচুসেটসে ১১টি, রোড আইল্যান্ডে ৪টি, কানেকটিকাটে ৭টি, নিউ জার্সিতে ১৪টি, ডেলাওয়ারে ৩টি, ম্যারিল্যান্ডে ১০টি, ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়াতে ৩টি ইলেক্টরাল ভোট রয়েছে।

এছাড়া ওরিগনে ৭, ইডাহোতে ৪টি, ওয়াইওমিং এ ৩টি, সাউথ ডাকোটায় ৩টি, নেবরাস্কায় ৫টি, আইওয়াতে ৬টি, ইলিনয়ে ২০টি, ইন্ডিয়ানায় ১১টি, ওহাইওতে ১৮টি, পেনসিলভানিয়ায় ২০টি, নেভাদায় ৬টি, ইউটায় ৬টি, কলোরাডোতে ৯টি, কানসাসে ৬টি, মিসৌরিতে ১০টি, কেন্টাকিতে ৮টি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ৫টি, ভার্জিনিয়াতে ১৩টি, ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫টি, ‌আরিজোনায় ১১টি, নিউ মেক্সিকোতে ৫টি, টেক্সাসে ৩৮টি, ওকলাহোমায় ৭টি, আরকানসাসে ৬টি, টেনেসিতে ১১টি, নর্থ ক্যারোলিনায় ১৫টি, লুইজিয়ানায় ৮টি, মিসিসিপিতে ৬টি, আলাবামায় ৯টি, জর্জিয়ায় ১৬টি, সাউথ ক্যারোলিনায় ৯টি, ফ্লোরিডায় ২৯টি, হাওয়াইতে ৪টি এবং আলাস্কায় ৩টি ইলেক্টরাল ভোট রয়েছে।

একেক রাজ্যের হাতে একেক সংখ্যক ভোট থাকার কারণে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে এমনভাবে ছক তৈরি করেন যেখানে তারা বেশি ভোট আছে এমন রাজ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গেল পাঁচটি নির্বাচনের দুটোতেই পপুলার ভোটে পিছিয়ে থাকলেও ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে এগিয়ে থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

সবশেষ ২০১৬ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ কম পপুলার ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০০০ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডাব্লিউ বুশ ২৭১টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যদিও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যাল গোর তার থেকে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার সাধারণ ভোট বেশি পেয়েছিলেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের উপর মূলত যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পূর্ণতা পায়। এ কারণে মোট ভোটের হিসাবে এগিয়ে থেকেও কোনো প্রার্থী পর্যাপ্ত ইলেক্টোরাল ভোট পেতে ব্যর্থ হলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন না।

আরো সংবাদ