স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

চার মাসে রেমিট্যান্স ৭৪ হাজার কোটি টাকা

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রতি মাসেই নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চারটি রেকর্ড চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে হয়েছে। ফলে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে শীর্ষ চার মাসের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস।

চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের প্রথম চার মাস (জুলাই- অক্টোবর) ৮৮২ কোটি ৬০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (১ ডলার ৮৪ টাকা ধরে) ৭৪ হাজার ১৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল ৬১৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪৩.২৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সদ্য বিদায়ী অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা ২১১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি এক মাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। যা এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

এর আগে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে গত সেপ্টেম্বর মাসে, চতুর্থ সর্বোচ্চ ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে গত আগস্ট মাসে। এছাড়াও চলতি বছরের গত মে মাসে ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং জুন মাসে ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। যা এখন সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার তালিকায় ৫ম ও ষষ্ঠ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ফলে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে শীর্ষ চারটি মাসের স্থান দখল করে আছে চলতি অর্থবছরের প্রথম চারটি মাস। আর শীর্ষ ছয়টি স্থান দখল করেছে বছরের সর্বশেষ ছয় মাস।

এদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠানোর কারণে তিনি প্রবাসীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যারা কষ্ট করে অর্থ প্রেরণ করে আমাদের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন আমি পুরো দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ।’

তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস যখন অসাধারন এবং অবিশ্বাস্য গতিতে রেমিট্যান্স অর্জিত হচ্ছিল তখন অনেকই বলতে শুরু করলেন এগুলো ঠিক নয়, থাকবেনা, টেকসই নয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও তাল মিলিয়ে বলতে শুরু করল এ প্রবাহ ঠিক নয়, টেকসই হবে না। অথচ বিশ্ব ব্যাংক এখন নিজেই বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে এবং এবছর রেমিট্যান্স প্রবাহে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে থাকবে।’

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছর বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

এর আগে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৬৩১ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আছে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

পঞ্জিকাবছর হিসাবে, ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মাকির্ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। ২০১৮ সালে দেশে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো যথাক্রমে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।

আরো সংবাদ