স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

প্রতারণার শিকার প্রবাসীদের চাকরির ব্যবস্থা করছে ব্রুনাই হাইকমিশন

দালাল ও মানবপাচারচক্রের মাধ্যমে ব্রুনাই গিয়ে বনজঙ্গল ও রাস্তায় ঘুরছেন শত শত প্রবাসী। কাজ না পেয়ে প্রতারিত এসব বাংলাদেশির অনেকেই দ্বারস্থ হচ্ছেন ব্রুনাইয়ের বাংলাদেশ হাইকমিশনে। বিপুল টাকা খরচ করে বুকভরা স্বপ্ন দিয়ে বিদেশ গিয়ে এখন অনেকেই দিশেহারা। প্রতারিত হওয়া এসব বাংলাদেশিকে ব্রুনাইয়ে চাকরি দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। ব্রুনাইয়ের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে কর্মসংস্থান করে দিচ্ছেন হাইকমিশনের কর্মকর্তারা।

হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে শ্রম উইংয়ের উদ্যোগে বুধবার (১১ নভেম্বর) বাংলাদেশ হাইকমিশন চত্বরে জব ফেয়ারের আয়োজন করা হয়। প্রথম দিনে শতাধিক বেকার প্রতারিত হওয়া প্রবাসী এতে অংশ নেন। তাদের মধ্য থেকে ৬৫ জনকে তিনটি কোম্পানিতে চাকরি নিশ্চিত করা গেছে বলে জানিয়েছেন শ্রম উইংয়ের ফার্স্ট সেক্রেটারি মো. জিলাল হোসেন।

তিনি জানান, প্রতারিত হয়ে আসা বাংলাদেশিদের ব্রুনাইয়ের বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি পাইয়ে দেয়ার জন্য এই জব ফেয়ারের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু এত প্রবাসী ভিড় করেছেন যে, একদিনে হচ্ছে না। আমরা শুক্রবার পর্যন্ত এটা চালু রাখব। আমরা প্রায় ৫০০ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করব। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা রাজি হয়েছেন। আরও কোম্পানির সঙ্গে আমরা কথা বলব।

হাইকমিশন সূত্র জানায়, আজ সকালে জব ফেয়ারের উদ্বোধন করেন হাইকমিশনার নাহিদা রহমান সুমনা। এ সময় কমিশন ও শ্রম উইংয়ের অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। জব ফেয়ারে ব্রুনাইস্থ তিনটি চীনা কোম্পানি এবং শতাধিক বেকার শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। হাইকমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে শ্রমিকদের পাসপোর্ট ও দলিলাদি যাচাই এবং মৌখিক ও দক্ষতা পরীক্ষা গ্রহণ সাপেক্ষে চাকরিপ্রত্যাশীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়।

মেলায় অংশ নেয়া তিনটি কোম্পানির সাধারণ শ্রমিক পদে ৫৫ জন, টাইল সেটার পদে ২২ জন, ম্যাসন পদে ২৮ জন, ওয়েল্ডার ২০ জন, হেভি ভেহিকল ড্রাইভার পদে ১০ জন, স্ক্যাভেটর অপারেটর পদে পাঁচজন অর্থাৎ মোট ১৪০ জন কর্মীর চাহিদার বিপরীতে ৬৫ জন কর্মীকে বিভিন্ন পদে বাছাই করা হয়। ভিসা দালালির প্রতারণার শিকার অনেক কর্মীর দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও আবশ্যক দলিলাদির অভাবে বর্ণিত কোম্পানিগুলো বাছাই করতে পারেনি। শ্রমকল্যাণ উইং ব্রুনাইয়ের বিভিন্ন নিয়োগকারী কোম্পানির সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে দক্ষতা ও যোগ্যতা মোতাবেক কর্মসংস্থানের মতো ব্যতিক্রমী আয়োজন করে। এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি বেকার কর্মী তাদের প্রবাসজীবনের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে বলে শ্রম উইং জানিয়েছেন।

হাইকমিশনসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, করোনাকালে ব্রুনাইয়ে অসংখ্য বাংলাদেশি কর্মী, বিশেষত দালাল দ্বারা প্রতারিত সহস্রাধিক কর্মী কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেকার কর্মীদের কোনো সুনির্দিষ্ট কাজের সুযোগ না থাকায় প্রবাসে তাদের জীবনযাপন অত্যন্ত অমানবিক পর্যায়ে উপনীত হয়। এসব শ্রমিকের প্রায় সবাই ফ্রি-ভিসার নামে নামসর্বস্ব কোম্পানিতে ব্রুনাই যান। দালালরা তাদের শুধু ব্রুনাইয়ে আনার দায়িত্ব নেয় এবং এরপর নিরুদ্দেশ হয়ে পড়ে। ফলে বিদেশবিভূয়ে ভাষাজ্ঞানহীন এসব কর্মী অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েন।

ব্রুনাইতে শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে ভিসা সত্যায়নের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ‘বডি কন্ট্রাক্ট’ প্রক্রিয়ায় এসব কর্মীকে দালালচক্র পাচার করে। ভিসা দালালচক্রের বেশকিছু সদস্য বর্তমানে মানবপাচার মামলায় বিচারাধীন থাকলেও, এ চক্রের মূলহোতা মেহেদী হাসান বিজন এবং আব্দল্লাহ আল মামুন অপু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

হাইকমিশন সূত্রে জানা যায়, যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক ভিসায় দালালের খপ্পরে পড়ে বডি কন্ট্রাক্টে ব্রুনাই গেছেন তাদের কোনো কাজ ছিল না। বেকার ও প্রতারিত এসব কর্মী দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে তারা দেশেও ফিরতে পারছিলেন না। ফলে এসব বেকার কর্মী বাড়ি থেকে চড়া সুদে ঋণ করে টাকা নিয়ে গিয়ে বিদেশে দিনাতিপাত করতে থাকেন। তাদের নতুন কর্মসংস্থানের কারণে এখন আর তাদের দেশে ফেরতে হচ্ছে না।

আরো সংবাদ