স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বাংলাদেশে কবে হবে করোনা টিকার ট্রায়াল?

বিশ্বে যখন একের পর এক করোনাভাইরাস টিকার কার্যকারিতা প্রমাণের দৌড়ঝাঁপ চলছে, তখন বাংলাদেশে তিনটি টিকার ট্রায়াল কবে শুরু হবে তা বলতে পারছেন না কেউ। এর বাইরে দেশের নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠানের টিকার ট্রায়ালও ঝুলে আছে। এ রকম চললে সামনের দিনে টিকার দামও বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে। কারণ দুটি টিকা ছাড়া বাকি সবগুলোরই দাম অনেক বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. মিজান সিদ্দিকী জানান, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আলোচিত মডার্নার টিকার প্রতি ডোজের দাম ২০ ডলার এবং ফাইজারের প্রতি ডোজের দাম ৩৮ ডলার। ফলে কোনো টিকার ট্রায়াল যদি বাংলাদেশে করা যায়, তাহলে সেগুলোর দামেও অন্তত কিছুটা সুবিধা পাওয়া যেত।

বিশেষজ্ঞরা জানান, এখন পর্যন্ত এগিয়ে থাকা টিকাগুলোর মধ্যে দামের দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য তুলনামূলক সহায়ক হবে অক্সফোর্ড ও রাশিয়ার টিকা। এদের টিকার দাম দুই ডলারের মধ্যে বা এর কাছাকাছি।

বাংলাদেশ ফার্মাকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এতই দুর্ভাগ্য যে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো একটি টিকার ট্রায়াল শুরুই করতে পারলাম না। কোথায় যে আটকে আছে তা-ও আমরা জানি না। আমাদের এখানে টিকার ট্রায়াল শুরু করা গেলে অন্ততপক্ষে আমরা কিছু করছি বলা যেত। কিন্তু সেদিকে কারোরই তেমন কোনো নজর নেই। সবাই আছে কবে কোন দেশ থেকে টিকা আসবে, তা নিয়ে হৈচৈয়ে ব্যস্ত। কিন্তু এটা সবার জানা উচিত যে অন্য কোনো দেশই তাদের চাহিদা পূরণের আগে বাংলাদেশকে টিকা দেবে না।’

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এখন সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে টিকার স্বত্ব উন্মুক্ত করার দাবি জোরালো করা।  এখন পর্যন্ত শুধু রাশিয়া আর অক্সফোর্ডের টিকার স্বত্ব উন্মুক্ত করা আছে। বাকি সবগুলোর স্বত্ব কিনতে হচ্ছে। এ জন্যই ওই সব টিকার দাম বেশি পড়বে। আর অক্সফোর্ড ও রাশিয়ার টিকার দাম এখনো কম আছে।

এদিকে ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের টিকার ট্রায়াল বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি শিগগিরই শুরু করবে বলে জানানো হয়েছে। সানোফি পাস্তুরের টিকার ট্রায়ালও আইসিডিডিআরবির করার প্রক্রিয়া চলছে। আলাদাভাবে সানোফি পাস্তুরের আরেকটি ট্রায়ালের প্রক্রিয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছেন, এ সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের চুক্তি সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চলছে।

অন্যদিকে আইসিডিডিআরবি এখনো দেশীয় ওষুধ কম্পানি গ্লোব বায়োটেকের টিকার ট্রায়ালের কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারছে না বলে দুই দিন আগে জানানো হয়েছিল গ্লোবের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া আইসিডিডিআরবির সঙ্গে চুক্তির পরও চীনের সিনোভ্যাক কম্পানির টিকার ট্রায়ালের আর কোনো অগ্রগতির খবর নেই।

ভারত বায়োটেকের অগ্রগতি : ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, ভারত বায়োটেকের টিকা ‘কোভ্যাকসিন’-এর তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের আওতায় ২৬ হাজার অংশগ্রহণকারী নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। এই ট্রায়ালের অংশ হিসেবে আগামী কয়েক মাসে ভারতব্যাপী ২৫টি ট্রায়াল সাইটের মাধ্যমে ২৬ হাজার অংশগ্রহণকারীকে তালিকাভুক্ত করা হবে। এরপর স্বেচ্ছাসেবীরা প্রায় ২৮ দিনের ব্যবধানে টিকার দুটি ডোজ নেবেন।

সূত্রগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এক হাজার অংশগ্রহণকারীর ওপর কোভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হয়েছে। এই ট্রায়ালে আশাব্যঞ্জক সুরক্ষা ও প্রতিরোধক্ষমতা দেখিয়েছে টিকাটি। বুধবার আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (এএমইউ) উপাচার্য তারিক মনসুর বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রায়ালের জন্য প্রথম স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন।

ভারত বায়োটেকের নির্বাহী পরিচালক সাই প্রসাদ গত মাসে বলেছিলেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে তাঁরা কভিড-১৯ ভ্যাকসিনটি চালু করার পরিকল্পনা করেছেন, যদি না সরকার এর আগেই ভ্যাকসিনটিকে আগেকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ভিত্তিতে জরুরিভাবে ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কার্যকারিতার তথ্য যদি ইতিবাচক হয় তবে এটি ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে চালু করা হতে পারে। তাহলে এটি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ডের পরে দেশটিতে চালু হওয়া দ্বিতীয় টিকা হবে।

বায়োটেকের নির্বাহী পরিচালক জানান, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় সংস্থাটি প্রায় ১৫০ কোটি রুপি এবং একটি নতুন প্লান্ট (যা ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হবে) স্থাপনে আরো ১২০-১৫০ কোটি রুপি ব্যয় করছে।

আরো সংবাদ