স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

আমিরাতের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় কতটা লাভবান হবেন বাংলাদেশিরা ?

বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রমবাজার আরব আমিরাত সম্প্রতি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৩টা দেশের নাগরিকদের ভিসায় বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। এর ফলে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। লেবার ভিসায় যাওয়া কর্মীদের পাশাপাশি ভ্রমণ  ও পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় যারা দেশটিতে গেছেন, তাদের কাজের ক্ষেত্রও প্রসারিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ রয়েছে।  তবুও দেশটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার। বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশটিতে অবস্থান করা বাংলাদেশির সংখ্যা ৮ লাখের মতো। দেশটিতে ভারত ও পাকিস্তানি শ্রমিকদের পরেই বাংলাদেশিদের অবস্থান।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে মোট ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৫৪৫ জন বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়। এটি বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে মোট বাংলাদেশি জনশক্তির  ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।  প্রথম স্থানে রয়েছে সৌদি আরব ৩১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

সম্প্রতি ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ হওয়া ১৩টি মুসলিম দেশ হচ্ছে- ইরান, তুরস্ক, সিরিয়া, সোমালিয়া, আলজেরিয়া, কেনিয়া, ইরাক, লেবানন, পাকিস্তান, তিউনিসিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও ইয়েমেন।  এর মধ্যে কেনিয়া ছাড়া প্রত্যেক দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ।  নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া ১৩টি দেশের বহু মানুষ সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজ করে।  বিশেষ করে পাকিস্তান, ইরান, সিরিয়া, লেবানন এবং আফগানিস্তানের অনেক অভিবাসী আছেন দেশটিতে।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেশটিতে বাংলাদেশিদের ভিসা চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সেক্ষেত্রে মুসলিমপ্রধান দেশটিতে বাংলাদেশিদের জন্য অপার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।  যদিও করোনা দেখা না দিলে চলতি বছরের শুরুতেই দেশটিতে নিয়মিত ভিসা কার্যক্রম চালুর সম্ভাবনা ছিল।

দালাল চক্রের নানা অপতৎপরতা এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিকের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হয়ে পড়ায় ২০১২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর ফলে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বেশ চাপের মধ্যে পড়ে।  শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পরও কিছু কিছু শ্রমিক সেখানে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এছাড়া ২০১৭ সালে পর্যটক শ্রেণিতে বাংলাদেশের ৭০ হাজার নাগরিকের জন্য ভিসা দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত।  তাদের অনেকেই সেখানে কাজের সুযোগ নেয়।  আগামী বছর দুবাইতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য মেলা এক্সপো ২০২১। এই মেলাকে কেন্দ্র করেও নতুন কিছু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।  তবে সেখানে কর্মরত শ্রমিকেরা যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেছেন, সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে বিপদে পড়েন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

চলতি বছরের শুরুতে নতুন করে ৫ বছরের পর্যটন ভিসা চালুর ঘোষণা দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত।  আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশিরাও এতে গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশ-ইউএই যৌথ কমিশনের সর্বশেষ সভায়ও ইউএই কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা দেওয়ার বিষয়ে আরও উদার নীতি গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা করছে বলে জানায়।

গত বছরের শেষদিকে বাংলাদেশি ভিসা খোলার অনেক কিছুই ইউএই সিস্টেমে আপডেট করা হয়েছে। যদিও দুবাই ভিসা সেন্টারের চেয়ারম্যান খামিস আল নাকবি বলেন, বাংলাদেশিদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা পেতে হলে সরকারকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে ইমিগ্রেশন খরচ কমানো, শ্রমিকদের রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষ থেকে এক মাসের অগ্রিম বেতন দেওয়া, ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ ও ‘ফ্রি ডিপার্চার সার্টিফিকেট’-এর মতো বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে হবে।

গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমিরাত সফর করেন। এ সময় তাকে আমিরাত সরকার পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে প্রবাসীসহ দেশবাসী আমিরাতের ভিসা খোলার দিকে তাকিয়ে ছিল।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, করোনার জন্য আরব আমিরাতে আমাদের শ্রমবাজার চালুর প্রক্রিয়া বিঘ্ন হয়।  তবে এবার শ্রমবাজার চালু হচ্ছে দক্ষদের জন্য। আমরা দালালমুক্ত জনশক্তি রপ্তানির ওপর জোর দিচ্ছি। এবার বাংলাদেশিরা আগের থেকে ভালো সুবিধা পাবেন বলে আশা করছি।

আরো সংবাদ