স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

দলে দলে ভাসানচরে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে রোহিঙ্গা নিয়ে ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে ১০টি যাত্রীবাহী বাস। ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেখানে।

আজ বৃহস্পতিবার (০৩ ডিসেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে ১০ বাসে রোহিঙ্গা নিয়ে রওনা হতে দেখা গেছে।

ধারণ করা হচ্ছে, প্রতিটি বাসে ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কত পরিবার রোহিঙ্গা ভাসানচর যাচ্ছেন, তার কোনো সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে পর্যায়ক্রমে লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

টেকনাফ শামলাপুরের সালামত উল্লাহ নামের এক  রোহিঙ্গা বলেন, সাগরে মাছ শিকার করে সংসার চালাতাম। এখন ভালো জীবনের আশায় ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যাচ্ছি।  শারমিন আক্তার (২০) নামে আরেক রোহিঙ্গা নারী বলেন, এখান থেকে ভাসানচরে খুব ভালো হবে। তাই আমরা পুরো পরিবার ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছি। সেখানে আমাদের থাকার জন্য ঘরসহ চাষাবাদ করতে জমিজমা দেওয়ার কথা বলছে মাঝিরা। আমরা চলে যাবো খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনরা দেখা করতে এসেছে। আমরা সেখানে যাওয়ার পর ভালো হলে স্বজনরাও যেতে রাজি হবেন। এই পুরো ক্যাম্প থেকে মোট ২৬ পরিবার ভাসানচরে যাচ্ছে বলে শুনেছি।

জানা গেছে, স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা পরিবারকেগুলোকে বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্প থেকে নিয়ে উখিয়া কলেজ মাঠে জড়ো করা হয়।

জানা যায়, কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫।

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ডিসেম্বর মাসেই আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

এদিকে গত বুধবার (২ ডিসেম্বর) জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী দিনে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে জাতিসংঘ অবগত আছে। কিন্তু শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রস্তুতি কিংবা রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংস্থাটিকে যুক্ত করা হয়নি।

এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে তথ্যও খুবই কম আছে বলে বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ব্যাপারে জাতিসংঘ তার আগেকার অবস্থানেই রয়েছে, অর্থাৎ ভাসানচরে যাবার ব্যাপরে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন জেনে-বুঝে এবং মুক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য জায়গাটি সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক, সুনির্দিষ্ট ও হালনাগাদ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যেন তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

ওই বছরের নভেম্বর মাসে কক্সবাজার থেকে এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। আশ্রয়ণ-৩ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে।

কিন্তু ২০১৮ সালে যখন প্রথম তাদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়, তখন থেকেই রোহিঙ্গারা সেখানে যাবার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের একটি দলকে ভাসানচর পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন দলটি ভাসানচরে যেতে সম্মতি জানালেও কক্সবাজারে ফিরে আবার টালবাহানা শুরু করে।

আরো সংবাদ