স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে হয়রানির শিকার ভিজিট ভিসার যাত্রীরা !

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন মধ্যপ্রাচ্যগামী ভিজিট ভিসার যাত্রীরা। অভিযোগ আছে, ‘কন্ট্রাক্ট’ ছাড়া ভিজিট ভিসার যাত্রীদের বিমানবন্দর পার হতে দেয়া হচ্ছে না।

সম্প্রতি বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। অপরদিকে হয়রানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে দুবাইয়ের প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। এরপরও হয়রানি কমেনি বলে দাবি প্রবাসীদের।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন দুবাইয়ে প্রবাসী ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন। দুবাই কনস্যুলেট জেনারেলের মাধ্যমে দেয়া এ স্মারকলিপিতে বলা হয়- ‘রেমিটেন্স খাতকে নষ্টের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের বহির্গমন ইমিগ্রেমন সেক্টর। ইমিগ্রেশনগুলোতে যাত্রীদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করার জন্য আপনার (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও গুটি কয়েক ইমিগ্রেশন অফিসারের অসদাচরণের কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। একশ্রেণির দালালের মাধ্যমে ইমিগ্রেশনের কতিপয় কর্মকর্তা যাত্রীদের কাছ থেকে ‘এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট’র নামে চাঁদা নিয়েছে। অপরদিকে কতিপয় ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট না করলে যাত্রীদের এয়ারপোর্ট থেকেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল খাইমার বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা এমএ মুছা জানিয়েছেন, ভিজিট ভিসায় আসা বাংলাদেশিদের ভিসার স্ট্যাটাস পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছে আমিরাত সরকার। ফলে বাংলাদেশিদের শ্রমবাজার প্রসারিত করার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশি বিমানবন্দরগুলোতে ইমিগ্রেশনের কতিপয় অসাধু ব্যক্তির খামখেয়ালির কারণে এ সুযোগ নষ্ট হতে চলেছে। ভিজিট ভিসায় আসা বাংলাদেশিদের টাকা ছাড়া কাউকে ইমিগ্রেশন পার হতে দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে আমিরাতে ভিজিট ভিসায় এসে এখন নতুন করে শ্রমিকের ভিসায় কাজ করার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা ইমিগ্রেশন পুলিশের কারণে হাতছাড়া হচ্ছে। এ শ্রমবাজার অন্যান্য দেশ দখল করে নিচ্ছে। এদিকে সম্প্রতি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের ইমিগ্রেশনে হয়রানি বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামানকে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন।

চিঠিতে সুজন উল্লেখ করেন, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে চট্টগ্রামের কয়েক লাখ প্রবাসী কর্মসূত্রে অবস্থান করেন এবং নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের কারণে তাদের একটা বড় অংশ দেশে ফিরে আসেন। সাম্প্রতিককালে আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে বিমান চলাচল শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামস্থ প্রবাসীরা তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্যগামী প্রবাসীদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা প্রশাসকের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন বলে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন। চিঠিতে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের স্বার্থে এবং মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের যাতায়াত সহজীকরণে চট্টগ্রাম থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী প্রবাসীদের ইমিগ্রেশনে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।

দুবাই প্রবাসী চট্টগ্রামের হাটহাজারীর রকিব উদ্দিনের অভিযোগ, গত ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাহ আমানত বিমানবন্দর হয়ে আরব আমিরাতের দুবাই যান রকিব। ওইদিন তিনি বিকালেই শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন। নিচ থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে ওপরে যেতেই এক লোক এসে তার পাসপোর্টটি নিয়ে যান। তিন ঘণ্টা পর তাকে পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে বলেন, আপনার ইমিগ্রেশন হয়েছে। আপনি দুবাই যেতে পারবেন না। আরেকজন বলেন, আপনার কাছে বাংলাদেশি টাকা আছে? উত্তরে ‘আছে’ বলায় ওই ব্যক্তি বলেন, বাংলাদেশি টাকা নিয়ে দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে পারবেন না। তাই আপনার কাছে থাকা বাংলাদেশি টাকাগুলো দিয়ে যান। এভাবে বলে তার কাছ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে নেন। ওইদিন শুধু রকিব নয়, তার সঙ্গে দুবাইগামী ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রীর কাছ থেকে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

আরব আমিরাতে কর্মরত প্রবাসী সাংবাদিক শিবলী আল সাদিক বলেন, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারইে প্রবাসীরা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে আরব আমিরাতে শ্রমিকের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি ভিজিট ভিসায় এসেও এখন স্থায়ী হয়ে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে আমিরাত সরকার। তবে ইমিগ্রেশন পুলিশের কন্ট্রাক্ট বাণিজ্যের কারণে এ সুযোগ হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন শাখায় দায়িত্বরত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন বলেন, টাকা পেলে ভিজিট ভিসার যাত্রীদের মধ্যপ্রাচ্যে যেতে দেয়া হচ্ছে কিংবা টাকা না পেলে যেতে দেয়া হচ্ছে না, এমন অভিযোগ সঠিক নয়। প্রবাসীদের হয়রানি করে ইমিগ্রেশন পুলিশের টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। ইমিগ্রেশন পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরো সংবাদ