স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

স্বামী-সন্তান প্রবাসে, কুলসুমের পেশা ‘চুরি’

চট্টগ্রাম নগরীতে এক বাসায় চুরির অভিযোগে এক গৃহপরিচারিকাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ বিভিন্ন তথ্য পেয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারীর স্বামী থাকেন সৌদি আরবে, ছেলে দুবাইয়ে। অর্থ সংকট না থাকলেও কেবল অভ্যাসের বশে ধনাঢ্য লোকজনের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ নেন তিনি। এভাবে চুরি করতে করতে তিনি এখন একজন পেশাদার চোরে পরিণত হয়েছেন, যিনি পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার প্রায় সব কৌশল অবলম্বন করতে শিখেছেন।

গ্রেফতার হওয়া বিবি কুলসুম ওরফে কুনসু’র (৪৫) বাড়ি  চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার নোয়ারবিলা ইউনিয়নে। গত ১৭ ডিসেম্বর গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এরপর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, দেড় মাস আগে গত ৩ নভেম্বর নগরীর ঘাটফরহাদবেগ এলাকার এক বাসিন্দা তার বাসা থেকে ৫০ ভরি সোনার অলংকার ও নগদ দুই লাখ টাকা চুরির অভিযোগে থানায় মামলা করেন। মামলায় তার বাসার গৃহপরিচারিকা হাসিনা বেগম ওরফে আছিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়। আর ঠিকানা উল্লেখ করা হয় বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়ন। কিন্তু গ্রেফতারের পর পুলিশ জানতে পারে, তার নাম বিবি কুলসুম ওরফে কুনসু। নাম-ঠিকানা বদলে তিনি ওই বাসায় কাজ নিয়েছিলেন।

গ্রেফতার কুলসুমের হেফাজত থেকে পুলিশ ২০ ভরি সোনার অলংকার ও নগদ এক লাখ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছিল। পরে মামলার বাদী অলংকারগুলো তাদের বলে শনাক্ত করেন।

ওসি মহসীন বলেন, ‘ওই বাসায় কাজে যোগ দেওয়ার তিন দিনের মাথায় চুরি করে কুলসুম পালিয়ে যায়। সে এতই ধূর্ত যে, কাজ নেওয়ার সময় মিথ্যা নাম-ঠিকানা ব্যবহার করেছে। এমনকি মোবাইল নম্বরও দিয়েছে ভুয়া। পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় তাকে গ্রেফতারে দেড় মাস সময় লেগেছে। গ্রেফতারের পরও সে আমাদের বারবার বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে।’

 ‘কুলসুমের স্বামী-সন্তান প্রবাসে থাকে। তবে এটা তার দ্বিতীয় সংসার। ঘরে টাকা-পয়সার কোনো অভাব নেই। চুরি করা তার নেশায় পরিণত হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। আমাদের ধারণা, সে একই প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম শহরের আরও অনেক বাসায় চুরি করেছে। কারণ চুরির পর তার আচরণ দেখে মনে হয়েছে সে পেশাদার। নাম-ঠিকানা বদলে কাজ নেওয়া, ভুল মোবাইল নম্বর দেওয়া, পুলিশকে বিভ্রান্ত করা— এসব কোনো সাধারণ অপরাধীর কৌশল হতে পারে না,’— বলেন ওসি মহসীন।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আইয়ুব উদ্দিন বলেন, ‘মোটামুটি অবস্থাসম্পন্ন হলেও কুলসুম চট্টগ্রাম শহরে থাকেন ভিক্ষুকের বেশে। বিভিন্ন বাসায় গিয়ে ভাত আর আশ্রয় চান। আবার কোথাও কোথাও গিয়ে কাজও চান। আর কাজ পেলেই সেই বাসায় চুরি করে পালিয়ে যান গ্রামের বাড়িতে।’

তিনি জানান, ২০১৯ সালের নভেম্বরে নগরীর বাকলিয়া থানার তুলাতলি এলাকায় ভিক্ষুকের বেশে একটি বাসায় গিয়ে কাজ নেন ‍কুলসুম। তিন মাস পর ওই বাসা থেকে গিয়ে কিছুদিন আরেক বাসায় সাবলেট থাকেন। আগের বাসা থেকে আনা একটি সিম ব্যবহার করে সে পরিবারের লোকজন ছাড়া অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এ কারণে কুলসুমকে গ্রেফতার করতে গিয়ে বারবার বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়েছে পুলিশকে। নগরীর বাকলিয়া, বাঁশখালীসহ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাতে হয়েছে। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঠিকানা শনাক্ত করতে হয়েছে।

আরো সংবাদ